বৈঠকেই সংঘাত, অভিষেকের কঠোর বার্তা
ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত নেতৃত্বকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন— ব্যক্তিগত মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে দলের হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে ব্লক স্তরে নেতৃত্বে রদবদল করবেন, সেটি মেনে নেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।
ঘাটাল ও আরামবাগের নেতৃত্বকে নিয়ে বিশেষ বৈঠক
সোমবার কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ঘাটাল ও আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। ঘাটালের সভায় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, শিউলি সাহা, প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর, পোড়খাওয়া নেতা অজিত মাইতি সহ বহু শাখা সংগঠনের নেতারা হাজির ছিলেন। অন্যদিকে আরামবাগ জেলা থেকেও সাংসদ মিতালী বাগ ও জেলা সভাপতি রামেন্দু সিংহ রায়–সহ একাধিক শীর্ষনেতা অংশ নেন।
ডেবরা-কেশপুরে মতবিরোধ চরমে
ঘাটাল বৈঠকে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব ধরা পড়ে হুমায়ুন কবীর ও রাধাকান্ত মাইতির মধ্যে। বর্তমানে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন রাধাকান্ত, আর ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন। অতীতের টানাপোড়েন এখনো বহাল— সেটাই বৈঠকে প্রকাশ্যে আসে। একইসঙ্গে কেশপুর ব্লক সভাপতি বদল নিয়ে শিউলি সাহার সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের মতপার্থক্যও নজরে আসে। ডেবরা, পিংলা ও কেশপুর— এই তিন ব্লক ঘিরেই বারবার কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় নেতারা।
অভিষেকের সাফ বার্তা: মমতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত
বৈঠকে অভিষেক পরিষ্কার জানিয়ে দেন, নেতাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে, তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই যেই সিদ্ধান্ত আসুক না কেন, সেটা সকলকে মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি তিনি দলীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ জোর দেন। তাঁর বক্তব্য— ব্যক্তিগত মতপার্থক্য ভুলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংগঠনকে শক্তিশালী করাই এখন মূল লক্ষ্য।
ঘাটালের মাস্টার প্ল্যান ঘিরে প্রচারের নির্দেশ
অভিষেক বৈঠকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সংগঠনকে সক্রিয়ভাবে প্রচারে নামার নির্দেশ দেন। তাঁর দাবি— কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি। সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের অর্থে কাজ চলছে। তাই মানুষের কাছে বারবার এই তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান।
সাংসদ দেবের অনুপস্থিতি নজর কাড়ল
ঘাটালের সাংসদ তথা অভিনেতা দেব অবশ্য এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তবে স্থানীয় পর্যবেক্ষণ বলছে— কেশপুর ব্লক সভাপতির সঙ্গে বিধায়ক শিউলি সাহার সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বিধায়ক চাইছেন নতুন সভাপতি, অন্যদিকে তৃণমূলের একাংশ চাইছে ২০২৬–এর ভোটে নতুন প্রার্থী। এই মতপার্থক্যের মাঝেই অভিষেক সাফ জানিয়েছেন, অবিলম্বে বিভেদ সরিয়ে রেখে একসঙ্গে মাঠে নামতে হবে।
আরামবাগে গেরুয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপরতা
আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার পরিস্থিতি খানিক ভিন্ন। এখানে অন্তত তিনটি বিধানসভা— পুরসুড়া, খানাকুল ও গোঘাটে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। তাই এই এলাকায় তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে ব্লক নেতৃত্বে রদবদলের ইঙ্গিত দেন অভিষেক। বৈঠকে সাংসদ মিতালী বাগ, মহিলা তৃণমূল নেত্রী করবী মান্না প্রমুখকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার কথাও উঠে আসে।
বদল অনিবার্য, অভিষেকের হুঁশিয়ারি
আরামবাগ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন— আগামী দিনে জেলা ও ব্লক স্তরে রদবদল হবেই। সেই সিদ্ধান্তকে সকলকেই মেনে নিতে হবে। কারণ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে নতুন নেতৃত্ব ও নতুন কৌশল প্রয়োজন। অভিষেকের কড়া বার্তা নেতাদের উদ্দেশে— দল আগে, ব্যক্তিগত স্বার্থ পরে।
আগামী বৈঠকে আরও রদবদলের ইঙ্গিত
মঙ্গলবার অভিষেক মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা ও শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করবেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই বৈঠকেও নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট হবে। তৃণমূলের ভেতরে ভাঙন রুখে ঐক্যের বার্তা দেওয়া এবং ২০২৬–এর লড়াইয়ের জন্য সংগঠনকে ঝালিয়ে নেওয়াই এই বৈঠকের আসল উদ্দেশ্য।