চমকপ্রদ মোড় – নিউজ দেখে চিনলেন পরিবার, তৎক্ষণাৎ নির্দেশ অভিষেকের!
শুক্রবার রাতেই হঠাৎ একটি খবর সম্প্রচারিত হয় নিউজ ১৮ বাংলায়। খবরটি ছিল মহারাষ্ট্রে আটকে পড়া একদল পরিযায়ী শ্রমিককে ঘিরে। সংবাদচিত্রে একজনকে দেখে কেঁপে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের জুলপিয়া গ্রামের এক পরিবার। চিনে ফেলেন তাঁরা—ওই যুবক আর কেউ নয়, তাঁদেরই ছেলে বাবাই সর্দার। বছর দুয়েক ধরে কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি কোনও খোঁজ মিলছিল না। পরিবার ছুটে যান বিধায়ক দিলীপ মণ্ডলের কাছে, যোগাযোগ করেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আর সেখানেই শুরু হয় নাটকীয় অভিযান।
‘অভিযান’ শুরু ডায়মন্ড হারবার থেকে—নির্দেশ যেতেই বিমানে বিশেষ প্রতিনিধি দল
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আর এক মুহূর্তও দেরি করেননি অভিষেক। সরাসরি নির্দেশ দেন স্থানীয় বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্বকে—"শ্রমিকদের উদ্ধার করে অবিলম্বে বাড়ি ফেরাতে হবে"। নির্দেশ মত রবিবার সন্ধ্যা ৭টার বিমানে কলকাতা থেকে মুম্বই রওনা হন চার সদস্যের বিশেষ প্রতিনিধি দল—পলাশ কর্মকার, অরুপ দাস, শচীন নস্কর এবং রাজীব গাজি। উদ্দেশ্য একটাই—বাবাই সর্দার সহ অন্যান্য আটকে পড়া শ্রমিকদের নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে আনা।
পরিযায়ী শ্রমিকেরা আতঙ্কে, বাড়ছে উদ্বেগ—রাজনৈতিক প্রতিবাদে পথে তৃণমূল
গত কয়েক মাস ধরেই পরপর ঘটছে এমন ঘটনা—বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে হেনস্থা, আটক, চিহ্নহীন গ্রেপ্তার, পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়া বা মারধরের অভিযোগে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাংলার বিভিন্ন পরিবারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পথে নেমে প্রতিবাদ শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সেই কণ্ঠে সুর মেলালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর স্পষ্ট বার্তা—"বাংলার শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হলে, তৃণমূল হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না!
বাবাই সর্দার—এক নাম, এক পরিচয়, এক প্রশ্ন: ভাষা, পরিচয়ে কি এভাবেই হারাতে হবে নিরাপত্তা?
জুলপিয়ার বাসিন্দা বাবাইয়ের পরিবার জানিয়েছে, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ যাবতীয় পরিচয়পত্র তাঁর কাছে রয়েছে। অথচ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবহেলায় তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ—বাংলার সন্তান হয়েও অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে যদি এমন দুরবস্থা হয়, তবে আমাদের আর কোথায় ঠাঁই?
মানবিক হস্তক্ষেপ নাকি কৌশলী রাজনৈতিক বার্তা? অভিষেকের পদক্ষেপ ঘিরে আলোচনা জোরদার
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, অভিষেকের এই তৎপরতা শুধুমাত্র মানবিকতার জায়গা থেকেই নয়, বরং এটা পরিযায়ী ইস্যুতে তৃণমূলের বৃহত্তর রাজনীতি চাঙ্গা রাখার কৌশল। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির ভূমিকা নিয়ে চাপ তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল, যেখানে অভিষেক হয়ে উঠছেন ক্রমে এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ। যদিও অভিষেক ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, মানুষের পাশে থাকাই ওঁর প্রধান কাজ—সেটাই করেছেন।
তৃণমূলের 'ঘরে ফেরানোর অভিযান' কি আদৌ নজির গড়বে?
শুধু বাবাই সর্দার নয়, বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ছড়িয়ে আছেন দেশের নানা প্রান্তে। তাঁদের নিরাপত্তা, অধিকার এবং সম্মান বজায় রাখতে রাজনৈতিক দলগুলির দায় কতখানি? এই প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম সারিতে উঠে আসছে—অন্তত এই ঘটনার পর। এখন দেখার, বাবাই সর্দারের ‘ঘরে ফেরা’ ঠিক কতটা প্রভাব ফেলবে বৃহত্তর রাজনীতির আঙিনায়।