পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় সোমবার সন্ধ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শিল্প মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপতি এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ রাজ্যের বহু প্রতীক্ষিত তাজপুর বন্দর প্রকল্প নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকের পর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আদানি গ্রুপ কি আবার ২৫,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ফিরছে?
চার বছর আগের চুক্তি, এখন নতুন কৌশল
তাজপুর বন্দর প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকার কয়েক বছর আগে আদানি গ্রুপকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সরকার পুরনো টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর মনে করা হয়েছিল আদানি গ্রুপ এই প্রকল্প থেকে সরে গেছে। যদিও গৌতম আদানির এই আকস্মিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ সেই অনুমানকে ভুল প্রমাণ করছে।
বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, তবে সূত্রের খবর বিনিয়োগ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে আদানি গ্রুপ এখনও এই প্রকল্পে আগ্রহী এবং সম্ভবত পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বাংলার লজিস্টিক নেটওয়ার্ক পরিবর্তনকারী প্রকল্প
তাজপুর বন্দরকে রাজ্য সরকার দীর্ঘকাল ধরে একটি পরিবর্তনকারী প্রকল্প হিসেবে দেখছে। এই বন্দর শুধুমাত্র সমুদ্র বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, বরং পূর্ব ভারতের লজিস্টিক নেটওয়ার্ককেও শক্তিশালী করবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত তাজপুর থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগ সম্ভব হবে।
বন্দর নির্মাণ হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যায়। এর পাশাপাশি রাজ্যের আয় বৃদ্ধি এবং ব্যবসার গতি ত্বরান্বিত হতে পারে। এই কারণে সরকার এই প্রকল্প নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিতে চায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প মহলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা
গৌতম আদানির এই বৈঠকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কয়েকদিনে শিল্প জগতের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সম্প্রতি তিনি টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরনের সঙ্গেও কলকাতায় বৈঠক করেছেন। এই ধারাবাহিকতা থেকে বোঝা যায়, রাজ্য সরকার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে জোর দিচ্ছে।
এই বছরের শেষে বাংলায় একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তাই রাজ্য সরকার বিনিয়োগকারীদের এই আস্থা দিতে চায় যে পশ্চিমবঙ্গ একটি স্থিতিশীল এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্য।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর প্রথম সাক্ষাৎ
২০২৩ সালে আদানি গ্রুপের উপর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট আসার পর থেকে গৌতম আদানিকে প্রকাশ্যে তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে, বিশেষ করে বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎও কম হয়েছে। এমতাবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে আদানি গ্রুপ আবারও বড় বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে সক্রিয় হতে শুরু করেছে।
ডিসেম্বর ২০২১-এর পর দ্বিতীয়বার বাংলা সফর
গৌতম আদানি এর আগে ডিসেম্বর ২০২১-এও পশ্চিমবঙ্গ এসেছিলেন। এরপর তিনি ২০২২ সালে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময় আদানি গ্রুপ রাজ্যে ১০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা বলেছিল। যদিও এরপর কিছু প্রকল্প ধীর গতিতে চলেছিল, কিন্তু এখন তার সক্রিয়তা দেখে মনে করা হচ্ছে পুরনো প্রকল্পগুলোতে আবারও গতি আসতে পারে।
তাহলে কি আবার তাজপুর পাবে আদানি?
বর্তমানে এটা স্পষ্ট নয় যে রাজ্য সরকার আদানি গ্রুপকে পুরনো টেন্ডার বাতিল করে বাদ দিয়েছে নাকি শুধুমাত্র প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করার জন্য পুনরায় টেন্ডার করা হয়েছে। তবে এই সাক্ষাৎ থেকে এটা স্পষ্ট যে আদানি গ্রুপ এখনও এই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহী। আদানি গোষ্ঠী এর আগেও প্রকাশ্যে জানিয়েছিল যে তারা এই প্রকল্পে আগ্রহী।