অজিৎ ডোভাল রাশিয়া সফরে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। পুতিন উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতায় আপত্তি জানিয়ে আমেরিকা ৫০% পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছে। ভারত তার স্বাধীন নীতিতে অটল রয়েছে।
Ajit Doval India Russia: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল রাশিয়া সফরে মস্কো পৌঁছন, যেখানে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এই সাক্ষাৎ এমন এক সময়ে হল যখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের উদ্বেগ হল ভারত রাশিয়ার থেকে সস্তা তেল কিনে বিশ্ব বাজারে মুনাফা করছে।
অজিৎ ডোভালের রাশিয়া যাত্রা
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত ডোভাল ৭ই অগাস্ট রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পৌঁছন, যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই মিটিংটি ক্রেমলিনে অনুষ্ঠিত হয়। ডোভাল সেখানে পৌঁছতেই পুতিন দ্রুত এগিয়ে এসে হাসিমুখে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। দুই নেতার মধ্যেকার উষ্ণতা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক শুধুমাত্র কূটনৈতিক নয়, কৌশলগত গভীরতাও রয়েছে।
আমেরিকার অসন্তোষ
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর দ্বিগুণ শুল্কের বোঝা চাপিয়েছেন। প্রথমে তিনি ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছিলেন। এখন তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ মূলত ভারতের রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আমেরিকার অভিযোগ, ভারত রাশিয়া থেকে কম দামে অশোধিত তেল কিনে তা পরিশোধন করে আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে। এর ফলে রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, যা সে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয় করছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিস্থিতি মানতে নারাজ।
ভারত-রাশিয়ার জ্বালানি অংশীদারিত্ব কেন আমেরিকার কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে
রাশিয়া ভারতকে তেল সরবরাহকারী প্রধান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করার পর ভারত কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে তার জ্বালানির চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ভারত আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই রণনীতি নিয়ে আমেরিকার আপত্তি রয়েছে কারণ তারা চায় রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ুক। কিন্তু ভারতের মতো বড় বাজার রাশিয়ার থেকে তেল কেনা আমেরিকার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দেয়। সেইজন্য ট্রাম্প ভারতের উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছেন যাতে সে রাশিয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।
বাণিজ্য চুক্তিও বিরোধের কারণ
শুল্ক বিতর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল বাণিজ্য চুক্তি। আমেরিকা চায় ভারত তার কৃষি এবং ডেয়ারি ক্ষেত্রকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য খুলে দিক। কিন্তু ভারত এই প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। ভারতের আত্মনির্ভরতার নীতি এবং স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সে আমেরিকার শর্ত মানতে প্রস্তুত নয়।
এই অচলাবস্থা ট্রাম্পের অসন্তোষ আরও বাড়িয়েছে। আমেরিকা চায় ভারত মুক্ত বাজারের নীতি গ্রহণ করুক, যেখানে ভারত তার অগ্রাধিকার এবং কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার উপর জোর দিচ্ছে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের কৌশলগত দৃঢ়তা
ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক কয়েক দশকের পুরনো। প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, শক্তি এবং কূটনীতির মতো ক্ষেত্রগুলোতে উভয় দেশের সহযোগিতা ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে। অজিত ডোভাল ও পুতিনের এই সাক্ষাৎ এমন এক সময়ে হয়েছে যখন বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।