২০২৫ সালের নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে, ২৩শে সেপ্টেম্বর মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা করা হবে। অবিবাহিতা পার্বতীর এই রূপটি ভক্তদের তপস্যা, সংযম, জ্ঞান এবং সুখ-সমৃদ্ধি দানকারী বলে মনে করা হয়। এই দিনে শুভ রঙ, মন্ত্র, আরতি এবং ভোগের মাধ্যমে দেবীর কৃপা লাভ করা হয়।
নবরাত্রি 2025: মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা – শারদীয়া নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে সারা দেশে মা ব্রহ্মচারিণীর পূজার আয়োজন করা হবে। মা ব্রহ্মচারিণী হলেন মাতা পার্বতীর অবিবাহিতা রূপ, যাঁকে বিশেষভাবে জ্ঞান, সংযম এবং সুখ-সমৃদ্ধি দানকারী দেবী হিসাবে মনে করা হয়। এই উপলক্ষে ভক্তরা সাদা ফুল, চন্দন এবং অক্ষত নিবেদন করবেন এবং মন্ত্র জপ করবেন। পূজায় আরতি, ভোগ এবং শুভ রঙের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে এই দিনে মায়ের আরাধনা করলে মঙ্গল দোষ কমে যায় এবং জীবনে ইতিবাচক শক্তি আসে।
মা ব্রহ্মচারিণীর স্বরূপ ও গুরুত্ব
মা ব্রহ্মচারিণীকে শ্বেত বস্ত্রে সুশোভিত দেখানো হয়। তাঁর ডান হাতে জপমালা এবং বাঁ হাতে কমণ্ডল থাকে। এই রূপটি সংযম, সাধনা এবং পবিত্রতার প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রীয় বিশ্বাস অনুসারে, মা ব্রহ্মচারিণী মঙ্গল গ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই, তাঁর পূজার মাধ্যমে মঙ্গল দোষ এবং তার সাথে জড়িত অশুভ প্রভাব হ্রাস পায়।
দ্বিতীয় দিনের পূজার গুরুত্ব
নবরাত্রির এই দিনে মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা পদ্ধতি, মন্ত্র, কথা, আরতি, ভোগ এবং শুভ রঙকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পূজার সময় 'ওঁ দেবী ব্রহ্মচারিণ্যৈ নমঃ' মন্ত্র জপ করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। ভক্তরা এই উপলক্ষে মায়ের কথা ও আরতি করে আশীর্বাদ লাভ করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, মা ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা করলে জীবনে তপস্যা, সংযম এবং সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
দ্বিতীয় দিনের শুভ রঙ
নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে মা ব্রহ্মচারিণীর পূজার সময় নীল, সবুজ এবং সাদা রঙকে শুভ বলে মনে করা হয়। ঐতিহ্য অনুসারে, এই দিনে ভক্তরা পূজা স্থানের সজ্জা, বস্ত্র এবং ভোগে এই রঙগুলির বেশি ব্যবহার করেন। মনে করা হয় যে এই রঙগুলি ইতিবাচক শক্তি বাড়ায় এবং মা ব্রহ্মচারিণীর কৃপা লাভে সহায়ক হয়।
মা ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা
নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে মা ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা জ্ঞান, সংযম এবং তপস্যার শক্তি লাভের জন্য করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, মা ব্রহ্মচারিণী ব্রহ্মা জীর প্রিয় এবং জ্ঞান দানকারী দেবী হিসাবে বিবেচিত হন। ভক্তরা মনে করেন যে ব্রহ্মা মন্ত্র জপ করলে জীবনে ইতিবাচকতা এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। মা ব্রহ্মচারিণীকে বেদ এবং বিশেষ করে গায়ত্রী মন্ত্রের অধিষ্ঠাত্রী মাতা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে মায়ের উপাসনা করলে দুঃখ ও সংকট দূর হয় এবং জীবনে স্থিরতা আসে। যে ব্যক্তি মা ব্রহ্মচারিণীর মহিমা জেনে তাঁকে স্মরণ করেন, তাঁর ভক্তি ও বৈরাগ্য উভয়ই স্থির থাকে। রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে শ্রদ্ধার সাথে মা ব্রহ্মচারিণীর মন্ত্র জপ করা বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। ভক্তিতে আলস্য ত্যাগ করে মায়ের স্তুতি করলে ভক্ত সুখ ও শান্তি লাভ করেন। ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে, মা ব্রহ্মচারিণী তাঁর ভক্তদের সমস্ত কাজ পূর্ণ করেন এবং তাঁদের সম্মান রক্ষা করেন।
পৌরাণিক কথা
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, মা ব্রহ্মচারিণী মাতা পার্বতীরই অবিবাহিতা রূপ। ভগবান শিবকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য তিনি কঠোর তপস্যা করেছিলেন। এই তপস্যার সময় তিনি দীর্ঘকাল কেবল ফল-ফুল এবং কখনও কখনও পাতার উপর বেঁচে ছিলেন। এই কঠোর সাধনার কারণেই তিনি "ব্রহ্মচারিণী" নাম লাভ করেন। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তাঁর নিষ্ঠা ও তপস্যায় ভগবান শিব প্রসন্ন হন এবং অবশেষে তিনি মাতা পার্বতীকে পত্নী রূপে গ্রহণ করেন।
মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা পদ্ধতি
নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে সকালে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করার এবং মা ব্রহ্মচারিণীর ধ্যান করে পূজার সংকল্প নেওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। পূজার সময় মা ব্রহ্মচারিণীকে সাদা ফুল, চন্দন এবং অক্ষত নিবেদন করা শুভ বলে মনে করা হয়। ভক্তরা মা ব্রহ্মচারিণীর প্রধান মন্ত্র "ওঁ দেবী ব্রহ্মচারিণ্যৈ নমঃ" জপ করেন।
সেই সাথে "যা দেবী সর্বভূতেষু ব্রহ্মচারিণী রূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥" মন্ত্রটিও উচ্চারণ করা হয়। পূজা সম্পন্ন হওয়ার পর মা ব্রহ্মচারিণীর আরতি নামানোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সবশেষে মাকে মিষ্টি প্রসাদ নিবেদন করে আশীর্বাদ লাভের ঐতিহ্য রয়েছে।
মা ব্রহ্মচারিণী মন্ত্র
প্রধান মন্ত্র
ওঁ দেবী ব্রহ্মচারিণ্যৈ নমঃ
যা দেবী সর্বভূতেষু ব্রহ্মচারিণী রূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
ধ্যান মন্ত্র
বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্।
জপমালা কমণ্ডলু ধরা ব্রহ্মচারিণী শুভাম্॥
গৌরবর্ণা স্বাধিষ্ঠানস্থিতা দ্বিতীয় দুর্গা ত্রিনেত্রাম্।
ধবল পরিধানা ব্রহ্মরূপা পুষ্পালঙ্কার ভূষিতাম্॥
পরম বন্দনা পল্লবাধরাং কান্ত কপোলা পীন।
পয়োধরাম্ কমণীয় লাবণ্যং স্মেরমুখী নিম্ননাভি নিতম্বনীম্॥
স্তোত্র
তপশ্চারিণী ত্বং হি তাপত্রয় নিবারণীম্।
ব্রহ্মরূপধরা ব্রহ্মচারিণী প্রণমাম্যহম্॥
শঙ্করপ্রিয়া ত্বং হি ভুক্তি-মুক্তি দায়িনী।
শান্তিদা জ্ঞানদা ব্রহ্মচারিণী প্রণমাম্যহম্॥
কবচ মন্ত্র
ত্রিপুরা মে হৃদয়ম্ পাতু ললাটে পাতু শঙ্করভামিনী।
অর্পণ সদা পাতু নেত্রো, অর্ধরী চ কপোলৌ॥
পঞ্চদশী কণ্ঠে পাতু মধ্যদেশে পাতু মাহেশ্বরী॥
ষোড়শী সদা পাতু নাভৌ গৃহো চ পাদয়ো।
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সতত পাতু ব্রহ্মচারিণী॥