দিল্লিতে স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথির বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছে। পুলিশ আশ্রম থেকে ডিজিটাল ও ভৌত প্রমাণ জব্দ করেছে। তদন্তে ১৬৪ জন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
নয়াদিল্লি: দিল্লিতে স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথির বিরুদ্ধে সম্প্রতি একাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছে। এই ঘটনা রাজধানীতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং দিল্লি পুলিশ তার কার্যকলাপের নিবিড় তদন্তে নেমেছে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ অভিযুক্তের সম্পূর্ণ পটভূমি এবং আশ্রম সম্পর্কিত নথি পরীক্ষা করা শুরু করেছে।
কে এই স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী?
স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী, যার আসল নাম পার্থ সারথি, তিনি মূলত ওড়িশার বাসিন্দা। প্রায় ১২ বছর ধরে তিনি দিল্লির নিজের আশ্রমে বসবাস করছিলেন। পুলিশের মতে, স্বামীর সঙ্গে বিতর্কের পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও প্রতারণার মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল।
২০০৯ সালে দিল্লির ডিফেন্স কলোনিতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের হয়েছিল। এরপরে ২০১৬ সালে বসন্ত কুঞ্জের শারদা ইনস্টিটিউটের একজন ছাত্রীও তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। সেই মামলায় চৈতন্যনন্দ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি জামিন পেয়ে যান।
আশ্রমে স্বামীর অবস্থান
স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আশ্রমে তিনি ছাত্রছাত্রী এবং বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। দিল্লি পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৬৪ জন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে ১৭ জন মেয়ের জবানবন্দি আদালতেও রেকর্ড করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে যে তদন্ত চলাকালীন এটি প্রকাশ পেয়েছে যে স্বামী মেয়েদের ব্ল্যাকমেল করতেন এবং তাদের হুমকিও দিতেন। আশ্রমে তার প্রভাব এবং ছাত্রছাত্রীদের উপর নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি মামলার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
পুরোনো ফৌজদারি ইতিহাস
গত বছরগুলিতে স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলি তার পরিচয় এবং আশ্রমের কার্যকলাপের গুরুত্ব তুলে ধরে। ২০০৯ সালে দিল্লিতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের হয়েছিল। ২০১৬ সালে বসন্ত কুঞ্জে একজন ছাত্রী এফআইআর দায়ের করেছিলেন।
এই মামলাগুলির কারণে পুলিশ তার আশ্রমের সংশ্লিষ্ট রেকর্ড এবং সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে। হার্ডডিস্ক এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রমাণের তদন্তও চলছে।
বারবার স্থান পরিবর্তন
তদন্ত চলাকালীন জানা গেছে যে স্বামী চৈতন্যনন্দ ক্রমাগত তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। তিনি মোবাইল খুব কম ব্যবহার করেন, যার ফলে তাকে ট্র্যাক করা কঠিন হচ্ছে। সর্বশেষ অবস্থান উত্তরপ্রদেশের আগ্রা অঞ্চলে পাওয়া গেছে। এছাড়া পুলিশ এও তদন্ত করছে যে তিনি ইউএন নম্বর প্লেট কোথা থেকে তৈরি করিয়েছিলেন।
দিল্লি পুলিশের পদক্ষেপ
স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর দিল্লি পুলিশ তার পটভূমি এবং পূর্ববর্তী মামলাগুলির সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। আশ্রম সম্পর্কিত সমস্ত ডিজিটাল এবং ভৌত প্রমাণ জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, স্বামীর আশ্রম ছাত্রছাত্রীদের শোষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন পুলিশ এও খতিয়ে দেখছে যে তিনি অন্য স্থানেও কি এ ধরনের কার্যকলাপ চালিয়েছিলেন।