পাটনায় কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী বলেছেন যে স্বাধীনতার পর থেকে বিহারকে পরিকল্পিতভাবে অবহেলিত করা হয়েছে। তিনি শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যে পিছিয়ে পড়ার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির নীতিগুলিকে দায়ী করেছেন।
CWC Meeting: পাটনায় কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটি (CWC) এর বৈঠকের সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিহারের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে স্বাধীনতার পর থেকে বিহারের জনগণের সাথে ক্রমাগত অন্যায় হয়েছে এবং রাজ্যের উন্নয়নের সম্ভাবনাগুলিকে ক্ষমতাসীন দলগুলির নীতির কারণে দমন করা হয়েছে।
বৈঠকে রাহুল গান্ধী বলেছেন যে বিহারের মানুষ পরিশ্রমী ও প্রতিভাবান, তবুও রাজ্যটি শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং শিল্পর মতো মৌলিক ক্ষেত্রগুলিতে পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বিহারের অবহেলার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে দায়ী করেছেন।
বিহারের অবহেলা এবং পরিকল্পিত ব্যর্থতা
রাহুল গান্ধী স্পষ্ট করেছেন যে বিহারকে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে অবহেলিত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন যে রাজ্যের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের প্রাচুর্য সত্ত্বেও বিহার আজ দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির মধ্যে গণ্য।
তিনি এও প্রশ্ন তুলেছেন যে কীভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলির নীতিগুলি বিহারের উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিয়েছে এবং রাজ্যের সম্ভাবনাগুলিকে দমন করেছে। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন যে বিহারের অবহেলা কেবল পরিকল্পনার অভাব নয়, বরং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির দুর্বলতার ফল।
শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ
বৈঠকে রাহুল গান্ধী শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে বিহারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে রাজ্যে শিক্ষার মান দুর্বল, যুবকরা কর্মসংস্থানের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি অসন্তোষজনক।
তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তারা কেবল তাদের ঘনিষ্ঠ মানুষ এবং পরিবারের উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে, যখন দরিদ্র জনগণকে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সমস্যায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।
কৃষক ও শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে পরিযায়ী হচ্ছেন
রাহুল গান্ধী বিহারে কৃষক ও শ্রমিকদের সমস্যা নিয়েও জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে এই মানুষগুলো বাধ্য হয়ে পরিযায়ী হচ্ছেন, কর্মসংস্থানের সন্ধানে শহর ও অন্যান্য রাজ্যে যাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে রাজ্য সরকার এই দিকে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং দরিদ্রদের সমস্যা বেড়েই চলেছে।
কংগ্রেস নেতা এও জানিয়েছেন যে বিহারের মানুষ এবং সম্পদ দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু বর্তমান নীতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলি রাজ্যকে পিছিয়ে পড়ার চোরাবালিতে ঠেলে দিয়েছে।
বিহারের প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ
রাহুল গান্ধী বলেছেন যে বিহারে অপরিসীম প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এখানকার মাটি এবং এখানকার শ্রম দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও রাজ্যের যুব শক্তি ও প্রতিভা দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে কংগ্রেসের সরকার এলে বিহার তার ন্যায় পাবে এবং রাজ্যের অবহেলিত জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
কেন্দ্রের নীতি নিয়ে প্রশ্ন
রাহুল গান্ধী শুধু বিহারের সরকারগুলিকেই নয়, বরং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগুলি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন যে দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যা-এর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি কেন্দ্রের নীতিগুলি পর্যাপ্ত কার্যকর ছিল না। এছাড়াও তিনি জাতিগত আদমশুমারির প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন, যাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতিগুলিতে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যায়।
বিহারে কংগ্রেসের উন্নয়ন এজেন্ডা
রাহুল গান্ধী বৈঠকে এও স্পষ্ট করেছেন যে কংগ্রেসের সরকার এলে বিহারের উন্নয়নের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। তিনি বলেছেন যে রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প এবং কর্মসংস্থান ক্ষেত্রগুলিতে উন্নতি হবে এবং বিহারের নাগরিকরা তাদের অংশীদারিত্ব ও অধিকার পাবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে বিহারের জনগণ পরিশ্রমী ও প্রতিভাবান, এবং যদি তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুযোগ দেওয়া হয় তবে রাজ্যটি দেশের শীর্ষ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।