আমেরিকা এখন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনওরকম ছাড় দেওয়ার মেজাজে নেই। আমেরিকার বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ১ অগাস্ট ২০২৫ থেকে আমেরিকা তাদের নতুন শুল্ক আইন পুরোপুরি কার্যকর করবে। তিনি জানান, এইবার কোনও বিলম্ব বা ছাড় দেওয়া হবে না এবং কাস্টম বিভাগ সেই দিন থেকেই শুল্ক আদায় শুরু করবে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত, পিছিয়ে আসার কোনো इरादा নেই
হাওয়ার্ড লুটনিক এই বিবৃতিটি 'ফক্স নিউজ সানডে' অনুষ্ঠানে দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, "কোনও এক্সটেনশন মিলবে না, কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।" এর মানে হল আমেরিকা এখন শুল্ক নিয়ে সম্পূর্ণরূপে সিরিয়াস এবং তারা তাদের বাণিজ্যিক অ্যাজেন্ডা কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই পুরো সিদ্ধান্তের নেতৃত্ব নিজে দিচ্ছেন। যদিও তিনি স্কটল্যান্ডে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আধিকারিকদের সাথে আলোচনা করছেন, কিন্তু আপাতত শুল্ক নিয়ে কোনও নরম হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত কোন কোন দেশের সাথে চুক্তি হয়েছে?
আমেরিকা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র পাঁচটি দেশের সাথে শুল্ক নিয়ে চুক্তি করেছে। এই দেশগুলির মধ্যে ব্রিটেন, জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন অন্তর্ভুক্ত। এই দেশগুলি ১ আগস্টের আগে আমেরিকার সাথে কোনও না কোনও রূপে সহমতে পৌঁছেছে। যদিও চুক্তি সত্ত্বেও এই দেশগুলিকে কিছু বিশেষ শুল্কের হার মেনে নিতে হয়েছে, যা আগে থেকে লাগু করা ১০% এর বেস হারের চেয়ে বেশি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর চাপ অব্যাহত
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির পক্ষ থেকে এখন শেষ মুহূর্তে আবারও চুক্তির আশা করা হচ্ছে। কিন্তু লুটনিকের বক্তব্য অনুসারে, এখন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের হাতে। ইউরোপীয় দেশগুলির ভয়, যদি ১ আগস্টের আগে চুক্তি না হয়, তবে তাদের উপরেও ভারী শুল্কের বোঝা পড়তে পারে।
চুক্তি করা দেশগুলোও রেহাই পাবে না
মনে করা হচ্ছে যে আমেরিকা এই শুল্কের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চায়। আমেরিকার বিশ্বাস যে কিছু দেশ দীর্ঘ সময় ধরে অন্যায্য বাণিজ্যিক নীতি অনুসরণ করছে, যার কারণে আমেরিকান শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেইজন্য এখন ট্রাম্প প্রশাসন সেই দেশগুলির উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে, যারা আমেরিকার দৃষ্টিতে বাণিজ্যের নিয়ম ভঙ্গ করে।
শুল্কের প্রভাব কোথায় কোথায় পড়বে?
শুল্কের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সেই দেশগুলোর কোম্পানি এবং রপ্তানিকারকদের উপর, যারা আমেরিকান বাজারের উপর নির্ভরশীল। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় গোষ্ঠীর সাথে কোনও চুক্তি না হয়, তবে সেখানকার গাড়ি, ইস্পাত, মদ এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের উপর ভারী শুল্ক লাগতে পারে। এতে সেখানকার কোম্পানিগুলির খরচ বাড়বে এবং আমেরিকান ভোক্তাদের জন্যও জিনিসগুলি আরও দামি হতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে আমেরিকা
১ আগস্টের সময়সীমা দেখে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জগতে আবারও 'ট্রেড ওয়ার' অর্থাৎ বাণিজ্য যুদ্ধের আলোচনা জোরালো হয়েছে। বিশেষ করে চীন, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো বড় বাণিজ্যিক অংশীদারদের নিয়ে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে। যদি এই দেশগুলির সাথে আলোচনা না হয়, তবে আগামী মাসগুলোতে বাণিজ্য জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
আমেরিকার এজেন্ডা পরিষ্কার, এখন টার্গেটে 'আনফেয়ার ট্রেডার্স'
ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য সেই দেশগুলো যারা 'আনফেয়ার ট্রেডিং প্র্যাকটিস' অনুসরণ করে। অর্থাৎ, যারা আমেরিকান বাজারে তাদের সস্তা পণ্য দিয়ে প্রতিযোগিতা নষ্ট করে এবং আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারার্সদের ক্ষতি করে। এই কৌশলের অধীনে ট্রাম্প শুল্কের নতুন নিয়ম তৈরি করেছেন যাতে কোনও দেশ ছাড়ের আশা করতে না পারে।
ভারতও কি আসতে পারে लपेटे में?
ভারত-এর মতো দেশগুলোর জন্যও এই পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে, কারণ ভারতেরও আমেরিকার সাথে বাণিজ্যিক সংঘাতের পুরনো ইতিহাস রয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত ভারত নিয়ে কোনো ठोस বক্তব্য আসেনি, তবে এটা নিশ্চিত যে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ কোন দেশগুলোর উপর পড়বে, সেই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের আলোচনার মাধ্যমে হবে।
এখনও আলোচনার সুযোগ রয়েছে
ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য, শুল্ক লাগানোর পরেও আলোচনার রাস্তা খোলা থাকবে। এর মানে হল, যে দেশগুলো এখনও পর্যন্ত চুক্তি করেনি, তারা পরেও আমেরিকার সাথে আলোচনা করতে পারে, কিন্তু তখন শর্তগুলো আগের চেয়ে আরও কঠিন হতে পারে।
ট্রাম্পের কৌশল: প্রথমে চাপ, তারপর চুক্তি
ট্রাম্পের কৌশল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে - প্রথমে শুল্ক লাগিয়ে চাপ সৃষ্টি করা এবং তারপর চুক্তির টেবিলে ডাকা। এর আগে তিনি চীনের সাথেও এমনটা করেছিলেন। এবং এখন ইউরোপীয় দেশগুলোকেও সেই একই পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
১ আগস্ট কী হবে?
১ আগস্ট যখন আমেরিকার সীমান্তে কাস্টম বিভাগ নতুন শুল্ক আদায় করা শুরু করবে, তখন বিশ্ব বাণিজ্যের পুরো চিত্র পরিবর্তন হতে পারে। বিশ্বের বড় কোম্পানি এবং সরকারগুলো এটা স্থির করবে যে এখন তাদের আমেরিকার সাথে কেমন সম্পর্ক রাখা উচিত - চুক্তির সাথে নাকি শুল্কের চাপে।