প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) সংসদীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিশেষ প্রশংসা করেছেন। এর কারণ ছিল — অমিত শাহ কর্তৃক একটি নতুন রেকর্ড তৈরি।
নয়াদিল্লি: ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পদে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালের ৩০ মে তারিখে কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন এবং ২০২৫ সালের ৪ আগস্ট তিনি তার কার্যকালের ২,২৫৮ দিন পূর্ণ করেছেন, যা তাকে বিজেপির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
এই কৃতিত্ব কেবল সংখ্যার নয়, বরং একটি অবিচ্ছিন্ন প্রভাবশালী প্রশাসনিক নেতৃত্ব এবং কঠোর সিদ্ধান্তের প্রতীক, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা কাঠামোকে দিকনির্দেশ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অমিত শাহের রেকর্ড-ভাঙা কার্যকাল
অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদভার গ্রহণ করেন। তাঁর কার্যকাল সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁর এই ঐতিহাসিক কৃতিত্বের প্রশংসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এনডিএ সংসদীয় দলের বৈঠকে করেছেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে শাহ "স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নতুন শক্তি ও স্পষ্ট দিকনির্দেশ দিয়েছেন।"
অমিত শাহের কার্যকালের সবচেয়ে বড় কৃতিত্বগুলির মধ্যে একটি হল ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট তিনি সংসদে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করেন, যার ফলে ভারতের এই সংবেদনশীল রাজ্যটি এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল এবং জাতির ঐক্যের জন্য একটি মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এই পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বিরোধীদের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করেছেন এবং দেশের সামনে সরকারের শক্তিশালী অবস্থান রেখেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে অন্যান্য প্রধান কাজ
অমিত শাহ তাঁর কার্যকালে বেশ কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত ও আইন কার্যকর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধন আইন)
- এনআইএ (জাতীয় তদন্ত সংস্থা)-এর ক্ষমতার বিস্তার
- অনুপ্রবেশের ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ
- সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি
- ড্রাগস এবং সাইবার অপরাধের ওপর দ্রুত পদক্ষেপ
তাঁর কার্যশৈলীতে সংখ্যাগত অর্জনের চেয়ে নীতিগত স্পষ্টতা এবং রাজনৈতিক দৃঢ়তা বেশি দেখা যায়।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে কারা ছিলেন?
অমিত শাহের আগে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকার রেকর্ড ছিল লাল কৃষ্ণ আদভানির নামে, যিনি ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ থেকে ২০০৪ সালের ২২ মে পর্যন্ত মোট ২,২৫৬ দিন এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা পণ্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্থ, যিনি ১৯৫৫ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৬১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত, মোট ৬ বছর এবং ৫৬ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। এখন অমিত শাহ এই দুই প্রবীণ নেতাকে ছাড়িয়ে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন।
অমিত শাহের রাজনীতিতে যাত্রা গুজরাট থেকে শুরু হয়ে জাতীয় স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে তিনি বিজেপির জাতীয় সভাপতিও ছিলেন। তিনি কৌশল, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নির্বাচনী জয়ের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে বিবেচিত হন।