গাজার উপর সম্পূর্ণ দখল এবং হামাসকে নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এর ফলে যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে গেছে এবং গাজায় মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
Gaza Control Order: ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এবং হামাসের সামরিক কাঠামো ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন হামাসের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তে শান্তি প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে।
এপ্রিল ২০২৫-এ শুরু হয়েছিল সামরিক অভিযান
নেতানিয়াহু এপ্রিল ২০২৫-এ ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলানি ব্রিগেডকে গাজার প্রধান অঞ্চলগুলো - রাফাহ, বেইত হানুন এবং বেইত লাহিয়াতে হামাসের অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলো শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই অভিযান এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গোলানি ব্রিগেডের বিশেষ ভূমিকা
গোলানি ব্রিগেডকে হামাসের অস্ত্র, সুড়ঙ্গ এবং কৌশলগত ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে। এই ব্রিগেড সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বড় জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
গাজা দখলের কৌশল অনুমোদিত
ইজরায়েলের মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজার উপর সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা থেকেও অনুমোদন পেয়েছে। মন্ত্রীরা এও নিশ্চিত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত আলোচনায় 'গাজা দখল' এর মতো শব্দ ব্যবহার করেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের রাজনৈতিক এবং সামরিক উপস্থিতি সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে চান।
গাজাকে নিরস্ত্র করার অগ্রাধিকার
নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন যে তার লক্ষ্য হল গাজার সম্পূর্ণ নিরস্ত্রকরণ (Demilitarization) এবং হামাসের সম্পূর্ণ বিনাশ। এর আওতায় শুধুমাত্র অস্ত্র ধ্বংস করা নয়, হামাসের শাসনকেও শেষ করা অন্তর্ভুক্ত।
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সংকট
হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে মে ২০২৫-এ মার্কিন মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের উদ্যোগে ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এর বিনিময়ে হামাসকে ১০ জন বন্দীকে মুক্তি দিতে হত। কিন্তু নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার বক্তব্য ছিল, যুদ্ধবিরতি তখনই সম্ভব যখন হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে।
হামাসের জবাব এবং বাড়তে থাকা উত্তেজনা
নেতানিয়াহুর এই শর্ত হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য, তারা তাদের অস্ত্র ছাড়বে না। এই মতবিরোধের কারণে মার্চ ২০২৫ এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। আমেরিকা, মিশর ও কাতার-এর মতো দেশগুলোর মধ্যস্থতা সত্ত্বেও শান্তি আলোচনা বার বার ভেঙে গেছে।
হামাসের কাছে থাকা অস্ত্র ও সুড়ঙ্গ
ইজরায়েলের দাবি, হামাস গাজার সুড়ঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে ইরান থেকে পাওয়া রকেট, ক্রুড রকেট টেকনোলজি এবং অন্যান্য মারাত্মক উপাদান রয়েছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর বক্তব্য, হামাস এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, যার ফলে যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়।
ইজরায়েলের বিশ্বাস, হামাস ক্রমাগত ইরান, হিজবুল্লাহ এবং কাতার থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সহায়তা এবং অস্ত্র পায়। এর ফলে গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইজরায়েলের দৃষ্টিতে এই সমর্থনই হল এই সংঘাতের মূল।