অমিত শাহের জন্মদিন: এক কট্টর গান্ধীবাদী মায়ের সন্তান থেকে দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সংগ্রাম

অমিত শাহের জন্মদিন: এক কট্টর গান্ধীবাদী মায়ের সন্তান থেকে দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সংগ্রাম
সর্বশেষ আপডেট: 2 ঘণ্টা আগে

দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র প্রবীণ নেতা অমিত শাহের আজ জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি পরিবারে জন্মগ্রহণকারী অমিত শাহের জীবন সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক দৃঢ় সংকল্পে পূর্ণ ছিল। 

নয়াদিল্লি: দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আজ জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর মুম্বাইয়ে বসবাসকারী গুজরাটি দম্পতি কুসুম বেন এবং অনিলচন্দ্র শাহের ঘরে তাঁর জন্ম হয়। অমিত শাহের পিতামহ গায়কোয়াড়, বরোদা রাজ্যের মানসা রাজপরিবারের একজন ধনী ব্যবসায়ী (নগর শেঠ) ছিলেন। পরিবারে বাণিজ্যিক পটভূমি থাকা সত্ত্বেও, অমিত শাহ রাজনীতির জগতে পা রাখেন এবং ধীরে ধীরে তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও কৌশলগত ক্ষমতার জোরে রাজনীতিতে নিজের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেন।

প্রারম্ভিক জীবন ও পরিবার

অমিত শাহের জন্ম মুম্বাইয়ে কুসুম বেন এবং অনিলচন্দ্র শাহের ঘরে হয়েছিল। তাঁর পিতামহ গায়কোয়াড় বরোদা রাজ্যের মানসা রাজপরিবারের ধনী ব্যবসায়ী (নগর শেঠ) ছিলেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অমিত শাহ তাঁর পৈতৃক গ্রাম মানসায় ছিলেন, যেখানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর জীবনে তাঁর মায়ের গভীর প্রভাব ছিল, যিনি একজন কট্টর গান্ধীবাদী ছিলেন এবং তাঁকে খাদী পরিধান করতে ও দেশপ্রেমের শিক্ষা দিতেন।

সংঘের সঙ্গে সংযোগ ও রাজনৈতিক শুরু

অমিত শাহের জনজীবন ১৯৮০ সালে শুরু হয়, যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৬ বছর ছিল। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এ তরুণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগদান করে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন। এই সময়ে তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP)-এর সাথেও যুক্ত হন। ১৯৮২ সালে শাহকে ABVP-এর গুজরাট ইউনিটের যুগ্ম সচিব করা হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি বিজেপির জন্য একজন ভোটদান এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৭ সালে অমিত শাহ বিজেপির যুব মোর্চায় যোগ দেন এবং সমাজ সংস্কারক নানাজী দেশমুখের সংস্পর্শে আসেন, যিনি তাঁর কার্যশৈলী এবং নেতৃত্ব ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করেছিলেন।

১৯৮৯ সালে অমিত শাহকে বিজেপির আহমেদাবাদ ইউনিটের সচিব করা হয়। সেই সময় সারা দেশে শ্রীরাম জন্মভূমি আন্দোলন এবং একতা যাত্রার রাজনীতি চলছিল। শাহ এই আন্দোলনগুলিতে তাঁর দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেন। তিনি লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর নির্বাচন ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজনৈতিক সহযোগিতা

১৯৯০-এর দশকে গুজরাটে বিজেপির দ্রুত উত্থানের সময়, অমিত শাহের যোগাযোগ হয় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। মোদী গুজরাটে দলের সংগঠন সচিব ছিলেন এবং শাহ সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও সংগঠন সম্প্রসারণে তাঁর সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে অমিত শাহকে যুব মোর্চার জাতীয় কোষাধ্যক্ষ করা হয় এবং সেই বছরই সরখেজ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করে। তিনি ২৫,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে প্রথমবার বিধায়ক হন। এরপর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি লাগাতার প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে নিজের অবস্থান মজবুত করেন।

১৯৯৮ সালে শাহ গুজরাট বিজেপির প্রদেশ সচিব হন এবং এক বছরের মধ্যে তিনি প্রদেশ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অমিত শাহকে ‘গৌরব যাত্রা’ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনি স্বরাষ্ট্র, পরিবহন, মদ্যপান নিবারণ, সংসদীয় কার্য, আইন এবং আবগারি বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলিতে ছিলেন।

২০০৯ সালে তাঁকে গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি করা হয় এবং নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। ২০১৩ সালে বিজেপি তাঁকে জাতীয় সাধারণ সম্পাদক করে।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রণনীতির পরীক্ষা

২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হন, অমিত শাহকে উত্তর প্রদেশের ইনচার্জ নিযুক্ত করা হয়। তাঁর রণনীতি এবং সংগঠন দক্ষতার কারণে বিজেপি ইউপিতে ৭৩টি আসন লাভ করে এবং ভোটের হার ৪২% পর্যন্ত পৌঁছায়। এরপর ২০১৪ সালের ৯ জুলাই তাঁকে বিজেপির জাতীয় সভাপতি করা হয়, এই পদে তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলেন।

২০১৭ সালে অমিত শাহ গুজরাট থেকে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো গান্ধীনগর থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৭০% ভোটের হার নিয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৫,৫৭,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। তাঁর এই জয় তাঁর শক্তিশালী জনসমর্থন এবং কৌশলগত দক্ষতার প্রমাণ ছিল।

২০১৯ সালে অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এই পদে থেকে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা শক্তিশালী করার জন্য একাধিক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কার্যকালকে শৃঙ্খলা ও উৎসর্গের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শাহ সশস্ত্র বাহিনী ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সংস্কার, নাগরিক নিরাপত্তা, রাজ্যগুলির সহযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

Leave a comment