রেয়ার আর্থ বিপ্লব: চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভারতের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

রেয়ার আর্থ বিপ্লব: চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভারতের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

ভারত রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস-এর বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি সংস্থা IREL বিশাখাপত্তনমে স্যামেরিয়াম-কোবাল্ট ম্যাগনেটের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শুরু করবে, যা প্রতিরক্ষা এবং হাই-টেক সরঞ্জামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি চীনের ৯০% পরিশোধন ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে এবং ভারত প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার দিকে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ নেবে।

রেয়ার আর্থ: রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস-এর ক্ষেত্রে চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভারত ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি সংস্থা IREL (ইন্ডিয়া) লিমিটেড শীঘ্রই বিশাখাপত্তনমে স্যামেরিয়াম-কোবাল্ট ম্যাগনেটের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শুরু করবে, যা প্রতিরক্ষা এবং উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের কাছে বিশ্বের ৬% রেয়ার আর্থ মজুত রয়েছে এবং সরকার ‘ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন’-এর অধীনে অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। এই উদ্যোগটি কেবল চীনের উপর নির্ভরতা কমাবে না, বরং ভারতকে ক্লিন টেকনোলজি এবং প্রতিরক্ষা উৎপাদনে একটি বিশ্বব্যাপী শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পথে নিয়ে যাবে।

রেয়ার আর্থের গুরুত্ব এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এটিকে ২১শ শতাব্দীর নতুন তেলও বলা হচ্ছে। আসলে এটি ১৭টি বিরল ধাতুর একটি গোষ্ঠী, যা স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক যান, বায়ুকল এবং উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়। এই ধাতুগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে এগুলিকে বিশুদ্ধ করা এবং ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল। এই কারণেই এগুলি বিশ্বব্যাপী কৌশলগত এবং মূল্যবান বলে বিবেচিত হয়।

কো টাক মিউচুয়াল ফান্ডের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, যদিও এই ধাতুগুলি সাধারণ মানুষের চোখের আড়ালে থাকে, তবে এগুলি পরিষ্কার শক্তি, টেকসই ভবিষ্যৎ এবং একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যে দেশের কাছে এই ধাতুগুলির স্থিতিশীল সরবরাহ থাকবে, সেই দেশই ২১শ শতাব্দীর প্রযুক্তিগত দৌড়ে এগিয়ে থাকবে।

ভারতের দাবি ও সুযোগ

ভারতের কাছে বিশ্বের প্রায় ৬ শতাংশ রেয়ার আর্থ মজুত রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে ভারতের অংশ ১ শতাংশেরও কম। তবে, এই পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কেরল, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলিতে এই খনিজগুলির বিশাল মজুত রয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ তৈরি হবে।

মিশন ক্রিটিক্যাল মিনারেল এবং IREL-এর উদ্যোগ

ভারত সরকার ‘ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন ২০২৫’ চালু করেছে। এর উদ্দেশ্য হল অনুসন্ধান, খনন এবং প্রক্রিয়াকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। এই ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হল IREL-কে মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উন্নত প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সহজ হবে।

IREL শীঘ্রই বিশাখাপত্তনমে স্যামেরিয়াম-কোবাল্ট ম্যাগনেটের একটি নতুন কারখানা স্থাপন করবে। এই ম্যাগনেটগুলি উচ্চ প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি, ভারত KABIL এবং আমেরিকার ‘মিনারেল সিকিউরিটি পার্টনারশিপ’-এর মাধ্যমে বিশ্ববাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করছে।

চীনের আধিপত্য কমবে

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ রেয়ার আর্থের খনন এবং ৯০ শতাংশ পরিশোধন চীন দ্বারা করা হয়। এর অর্থ হল খনি যেখানেই থাকুক না কেন, বিশ্ব বেশিরভাগই চীনের উপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ চীনের খননে অংশ ৫১ শতাংশ এবং পরিশোধনে ৭৬ শতাংশ থাকতে পারে। এটি ভারতের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।

আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশের বড় বিনিয়োগকারীরা এখন চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের মতো স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল খুঁজছে। ভারতের এই কৌশল বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াতে সহায়ক হবে।

বেসরকারি খাত ও উৎসাহ

সরকার খনিজ ও খনি আইনে পরিবর্তন এনেছে এবং প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ-এর মতো প্রকল্প চালু করেছে। এটি বেসরকারি সংস্থাগুলিকে এই কঠিন খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করে। ২০৪০ সাল নাগাদ রেয়ার আর্থ উপাদানগুলির চাহিদা ৩০০ থেকে ৭০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ভারতের এই প্রচেষ্টাগুলি কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে ভারতকে ক্লিন টেকনোলজি এবং উন্নত প্রযুক্তিতে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসাবে গড়ে তোলার একটি বড় পদক্ষেপ।

Leave a comment