নকশাল আত্মসমর্পণ: ছত্তিসগড়ে বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে ১৭০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। কোথায়: ছত্তিসগড় রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে; কখন: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার; কে: আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী, রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী; কী ঘটেছে: বড় সংখ্যায় অস্ত্র সমর্পণ করে মূলধারায় ফেরা; কেন: মোদী সরকারের পুনর্বাসন ও কঠোর নীতি মিলিয়ে নকশালবাদ দমন অভিযান আরও গতি পেয়েছে। অমিত শাহ বলেন, “যারা অস্ত্র ফেলছে, তারা প্রশংসার যোগ্য; কিন্তু যারা হিংসার পথে থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চলবে।
১৭০ জনের আত্মসমর্পণ, সামগ্রিক ২৫৮ জনের অস্ত্র ত্যাগে চাঞ্চল্য
ছত্তিসগড়ে বৃহস্পতিবার এক বৃহৎ অভিযানের ফল হিসেবে ১৭০ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেন। এর আগের দিন রাজ্যে আরও ২৭ জন আত্মসমর্পণ করেছিলেন, এবং মহারাষ্ট্রে ৬১ জন মাওবাদী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। সব মিলিয়ে ২৫৮ জন অস্ত্র ত্যাগ করেছেন বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানান।শাহ লিখেছেন, “নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই আজ নকশালবাদ শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে। দেশের একাধিক রাজ্যে শান্তি ফিরছে, যা আমাদের নীতির বড় জয়।” নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটি নকশাল আত্মসমর্পণের সবচেয়ে বড় পরিসংখ্যান।
শাহের কঠোর বার্তা: “হিংসার পথে থাকলে রেহাই নেই”
অমিত শাহ তাঁর পোস্টে লেখেন, “যারা অস্ত্র ত্যাগ করে সংবিধানের প্রতি বিশ্বাস পুনর্গঠন করছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু যারা এখনও অস্ত্র হাতে রয়েছে, তাদের আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হতে হবে।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট—কেন্দ্রের নীতি একেবারেই ‘জিরো টলারেন্স’।শাহের এই বক্তব্য শুধু নকশালদের উদ্দেশেই নয়, বরং গোটা প্রশাসনিক কাঠামোকে এক কঠোর বার্তা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘোষণার মাধ্যমে কেন্দ্র ভবিষ্যৎ অভিযান আরও তীব্র করবে, বিশেষত ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং ছত্তিসগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকায়।
মোদী সরকারের নীতি: পুনর্বাসনের পাশাপাশি কঠোর অভিযান
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নীতি অনুযায়ী, আত্মসমর্পণকারীদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন প্রকল্প কার্যকর করা হচ্ছে। তাঁদের আর্থিক অনুদান, বাসস্থানের ব্যবস্থা, ও স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, “যে মাওবাদীরা অস্ত্র ত্যাগ করেছেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং সমাজের মূলধারায় ফিরতে সবরকম সহায়তা দেওয়া হবে।তবে শুধু আত্মসমর্পণ নয়—পাশাপাশি চলছে একাধিক জঙ্গি বিরোধী অভিযানও। সিআরপিএফ, বিএসএফ, কোবরা ও রাজ্য পুলিশ মিলিয়ে নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২০০-র বেশি সংঘর্ষে একাধিক মাওবাদী নিহত হয়েছে এবং বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার করা গেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: সরকার বলছে ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’
অমিত শাহের ঘোষণার পর বিজেপি একে ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে। দলের নেতারা বলছেন, মোদী সরকারের কড়া নীতি ও উন্নয়নমুখী পরিকল্পনাই নকশালদের অস্ত্র ফেলতে বাধ্য করেছে।অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, “শুধু আত্মসমর্পণই যথেষ্ট নয়—স্থানীয় উন্নয়ন ও জমি সমস্যার সমাধান না হলে হিংসা থামবে না।”রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাহের এই ঘোষণা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতেও তাৎপর্যপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সরকার এই ঘটনাকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা
ছত্তিসগড়, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানার সংযোগস্থলে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, একাধিক জঙ্গি শিবির ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং বড় বড় নেতাদের আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছে।অমিত শাহ বলেন, “যে কোনও ভারতীয় নাগরিক যদি হিংসার পথ ত্যাগ করে সংবিধান মেনে চলে, আমরা তাকে স্বাগত জানাব।তবে তিনি আবারও সতর্ক করেন, যদি কেউ অস্ত্র তুলে নেয়, তবে আমাদের বাহিনী তার উপযুক্ত জবাব দেবে।
বিশেষজ্ঞদের মত: দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নই স্থায়ী সমাধান
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অভিযানের জোরে নকশালবাদ শেষ করা সম্ভব নয়। দরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানভিত্তিক উন্নয়ন। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ‘আকাঙ্ক্ষা জেলা’ প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মসমর্পণকারীদের সঠিক পুনর্বাসনই হবে প্রকৃত সাফল্যের মাপকাঠি।
ছত্তিসগড়ে একসঙ্গে ১৭০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। আরও ৮৮ জন গত দুই দিনে অস্ত্র ত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নকশালবিরোধী অভিযানের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং সতর্ক করেন—যারা এখনও অস্ত্র হাতে রাখবে, তাদের রেহাই নেই।