নতুন অমৃতসর-কাটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস: ভক্তদের জন্য সুখবর

নতুন অমৃতসর-কাটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস: ভক্তদের জন্য সুখবর

নতুন অমৃতসর-কাটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মাধ্যমে এখন ভক্তরা সকালে বৈষ্ণো দেবী এবং সন্ধ্যায় স্বর্ণ মন্দির দর্শন করতে পারবেন। এই ট্রেনটি ৫.৩৫ ঘন্টায় যাত্রা সম্পন্ন করবে, মঙ্গলবার ব্যতীত সপ্তাহে ছয় দিন চলবে এবং বিয়াস, জলন্ধর সিটি, পাঠানকোট ক্যান্টনমেন্ট, জম্মু তাওয়াই স্টেশনে থামবে।

Vande Bharat Express: উত্তর ভারতের ভক্তদের জন্য একটি বড় সুখবর এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অমৃতসর এবং কাটরার মধ্যে চলাচলকারী নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের শুভ সূচনা করেছেন। এই দ্রুতগতির ট্রেনটি শুরু হওয়ার ফলে যাত্রীরা এখন সকালে মা বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরে পূজা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরেও দর্শন করতে পারবেন। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই ট্রেনটি দুটি ধর্মীয় স্থানের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৫ ঘন্টা ৩৫ মিনিটে পূরণ করবে।

ধর্মীয় পর্যটনে নতুন গতি

কাটরা থেকে অমৃতসর পর্যন্ত সাধারণ ট্রেনে যেতে এতদিন অনেক সময় লাগতো, যার ফলে একই দিনে দুটি স্থানে ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এই দূরত্ব খুব কম সময়ে অতিক্রম করবে। এটি শুধুমাত্র জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবের মধ্যে ধর্মীয় পর্যটনকে উৎসাহিত করবে না, সেইসঙ্গে সারা দেশ থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের যাত্রাও সহজ হবে।

স্টেশন এবং বিরতি

এই বন্দে ভারত ট্রেনটি কাটরা এবং অমৃতসরের মধ্যে চারটি প্রধান স্টেশনে থামবে—

  • বিয়াস
  • জলন্ধর সিটি
  • পাঠানকোট ক্যান্টনমেন্ট
  • জম্মু তাওয়াই

ট্রেনটি মঙ্গলবার ব্যতীত সপ্তাহে ছয় দিন চলবে। এর ফলে যাত্রীরা তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা সহজেই করতে পারবেন।

উদ্বোধনের বিশেষ দিন

রবিবার উদ্বোধনের দিনে বিশেষ অনুষ্ঠানের কারণে ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের থেকে কিছুটা দেরিতে ছেড়েছিল। সকাল ১০:৫০ মিনিটে কাটরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে এটি বিভিন্ন স্টেশনে থামতে থামতে বিকেল ৪:০৫ মিনিটে জলন্ধর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। আট মিনিটের বিরতির পর ৪:১৩ মিনিটে এটি আবার অমৃতসরের দিকে রওনা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালীন কাটরা, জলন্ধর, পাঠানকোট এবং অমৃতসর সহ বিভিন্ন স্টেশনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যাত্রী এবং স্থানীয় মানুষজন ট্রেনের প্রথম যাত্রাকে আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বেঙ্গালুরুর কেএসআর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অমৃতসর-কাটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ছাড়াও বেঙ্গালুরু থেকে বেলগাভি এবং নাগপুর (আজনি) থেকে পুনে পর্যন্ত আরও দুটি বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধন করেছেন।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বন্দে ভারত ট্রেনগুলি শুধুমাত্র আধুনিক ভারতের ছবি পরিবর্তন করছে না, সেইসঙ্গে যাত্রীদের গতি, সুবিধা এবং নিরাপত্তার একটি নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত শহরগুলোর মধ্যে দ্রুতগতির সংযোগ পর্যটন এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।'

যাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা

অমৃতসর-কাটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে যাত্রীদের সুবিধার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে স্বয়ংক্রিয় দরজা, আরামদায়ক আসন, প্রতিটি কোচে সিসিটিভি ক্যামেরা, জিপিএস-ভিত্তিক যাত্রী তথ্য ব্যবস্থা, বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট এবং উন্নত এয়ার কন্ডিশনিংয়ের মতো সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকেও এই ট্রেন অত্যাধুনিক ব্রেকিং সিস্টেম এবং ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেমে সজ্জিত। দ্রুত গতিতে চলা সত্ত্বেও এর যাত্রা খুবই মসৃণ এবং আরামদায়ক হবে।

পর্যটন এবং বাণিজ্যের উপর প্রভাব

এই ট্রেনটি শুরু হওয়ার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবের ধর্মীয় পর্যটন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বৈষ্ণো দেবী মন্দির এবং স্বর্ণ মন্দির উভয়ই দেশ-বিদেশ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে আস্থার কেন্দ্র। এখন তীর্থযাত্রীরা একই দিনে উভয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন, যা শুধু সময়ের সাশ্রয় করবে তাই নয়, হোটেল, ট্যাক্সি এবং অন্যান্য পরিষেবার চাহিদাও বাড়িয়ে তুলবে।

এছাড়াও, ব্যবসায়িক যাত্রীরাও এর থেকে উপকৃত হবেন, কারণ কাটরা এবং অমৃতসর উভয় শহরই বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতগতির সংযোগের ফলে পণ্য পরিবহন এবং ব্যবসায়িক মিটিংয়ের জন্য যাতায়াতও সহজ হবে।

স্থানীয় মানুষের মধ্যে উৎসাহ

কাটরা এবং অমৃতসরের মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গর্বের মুহূর্ত ছিল। কাটরায় স্টেশনটি ফুল ও আলো দিয়ে সাজানো হয়েছিল, অন্যদিকে অমৃতসরেও যাত্রীদের ঢোল-নগড়া এবং ঐতিহ্যবাহী ভাঙড়া-গিড্ডা পরিবেশনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছে। অনেক ভক্ত জানিয়েছেন যে এই ট্রেন তাদের বহু বছরের পুরনো ইচ্ছা পূরণ করছে, যার মাধ্যমে তারা একই দিনে মা বৈষ্ণো দেবী এবং স্বর্ণ মন্দির উভয় দর্শন করতে পারবেন।

Leave a comment