অন্ধ্র প্রদেশে ৩,২০০ কোটি টাকার মদ কেলেঙ্কারির তদন্ত চলাকালীন একটি ফার্মহাউস থেকে ১১ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হওয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে নতুন মদ নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এই কেলেঙ্কারিটি সংঘটিত হয়েছে। স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) তদন্ত করছে।
অন্ধ্র প্রদেশ: অন্ধ্র প্রদেশে ৩,২০০ কোটি টাকার মদ কেলেঙ্কারির তদন্তে নতুন মোড়। হায়দরাবাদের কাছে রঙ্গারেड्डी জেলার একটি ফার্মহাউস থেকে ১২টি বাক্সে লুকানো ১১ কোটি টাকা নগদ উদ্ধারের পরে এই পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সেই মদের কেলেঙ্কারি, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম কেলেঙ্কারি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কোথায় এই অভিযান চালানো হয়েছিল এবং কী পাওয়া গেছে?
শমশাবাদ মণ্ডলের কাচারাম গ্রামে অবস্থিত সুলোচনা ফার্মহাউসে অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডি গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালায়। মধ্যরাতে চালানো এই অভিযানে ১২টি লোহার বাক্সে লুকানো প্রায় ১১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, এই অর্থ মদ ব্যবসার অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভিযানটি গোপন রাখা হয়েছিল এবং বাজেয়াপ্ত করা নগদ অর্থ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মদের কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বরুণ পুরুষোত্তমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছিল, যাকে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে।
অন্ধ্র প্রদেশের মদ কেলেঙ্কারিটি কী?
মদ কেলেঙ্কারির তদন্তকারী বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) প্রকাশ করেছে যে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশের তৎকালীন সরকার মদ ব্যবসাকে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটি নতুন নীতি প্রয়োগ করে। এই নীতির আড়ালে জনপ্রিয় মদের ব্র্যান্ডগুলিকে সরিয়ে নতুন এবং অপরিচিত ব্র্যান্ডগুলিকে প্রচার করা হয়েছিল, যেগুলি থেকে পূর্ব নির্ধারিত কমিশন নেওয়া হত। এই ব্র্যান্ডগুলির পিছনে থাকা কোম্পানিগুলিকে নিয়মিত অর্ডার দেওয়া হত, এবং বিনিময়ে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেওয়া হত। এই অর্থ সরাসরি সরকার-সংশ্লিষ্ট নেতা ও কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানো হত।
অভিযুক্তদের তালিকায় কারা রয়েছেন?
- কেসি রেড্ডি রাজা শেখর রেড্ডি – এই কেলেঙ্কারির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
- ওয়াই বিজয়সাই রেড্ডি – ওয়াইএসআরসিপির প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ এবং জগনের বিশ্বস্ত সহযোগী।
- পিভি মিঠুন রেড্ডি – ওয়াইএসআরসিপির সাংসদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডির ছেলে।
- বরুণ পুরুষোত্তম – যিনি জিজ্ঞাসাবাদে ফার্মহাউসে লুকানো নগদ অর্থের তথ্য দিয়েছেন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডিকে এখনও অভিযুক্ত করা হয়নি, তবে তাঁর প্রস্তাবিত মদ নীতির উল্লেখ চার্জশিটে রয়েছে। এই নীতিকেই পুরো কেলেঙ্কারির ভিত্তি হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
নতুন নীতি এবং জনগণের অসন্তোষ
মদের দোকান সীমিত সময়ের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল, দাম বাড়ানো হয়েছিল এবং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলি বাজার থেকে गायब হয়ে যায়। তাদের জায়গায় 'বুম', 'প্রেসিডেন্ট মেডেল' এর মতো অদ্ভুত নামের ব্র্যান্ড এসে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে প্রচুর মজা করা হয়েছে। জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। এই অসন্তোষের ফলস্বরূপ তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটক থেকে মদ চোরাচালান বেড়ে যায়। ২০২১ সালে সরকার মদের দাম কমাতে বাধ্য হয়, কিন্তু ততক্ষণে চোরাচালান ও নকল মদের ব্যবসা জোরদার হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধীদের আক্রমণ
এই কেলেঙ্কারি রাজ্যের রাজনীতিতে বড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং জনসেনা এই কেলেঙ্কারিকে রাজ্যের 'সবচেয়ে বড় লুট' বলে অভিহিত করেছে। বিরোধীরা দাবি করেছে যে মুখ্যমন্ত্রীকেও তদন্তের আওতায় আনা হোক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, 'জনগণের স্বাস্থ্য এবং কোষাগার দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি মদ্য নীতি নয়, ঘুষ নীতি ছিল।'
ভবিষ্যতের তদন্ত এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপ
SIT-এর তদন্ত এখন আরও দ্রুত হবে। সূত্রের খবর, যে কোম্পানিগুলো মদ সরবরাহের সুবিধা পেয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্ট এবং ব্যালেন্স শিট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আয়কর বিভাগ এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (ইডি) শীঘ্রই এই মামলায় যুক্ত হতে পারে। আপাতত, ফার্মহাউস থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং এটি আদালতে পেশ করা হবে।