অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ১৭,০০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি মামলায় ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদ আরও জোরদার হয়েছে এবং ব্যাংকগুলির থেকে ঋণ প্রক্রিয়ার তথ্য চাওয়া হয়েছে। তদন্তে জাল ব্যাংক গ্যারান্টি এবং সাইবার প্রতারণার ইঙ্গিত মিলেছে।
Loan Fraud: শিল্পপতি অনিল আম্বানির সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ১৭,০০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি মামলায় এবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সরাসরি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব চেয়েছে। ইডি এই বহুলচর্চিত কেলেঙ্কারিতে আম্বানি গ্রুপের একাধিক কোম্পানির পাশাপাশি ১২টির বেশি জাতীয় এবং বেসরকারি ব্যাংককে তদন্তের আওতায় এনেছে। ইডি-র নজর শুধু ঋণ নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখন এই তদন্ত সেই দিকে এগোচ্ছে যে ব্যাংক আধিকারিকদের যোগসাজশে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল কিনা, অথবা প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছিল কিনা।
ঋণ জালিয়াতি: কোন কোম্পানিগুলির ওপর কেন্দ্র করে তদন্ত?
ইডি-র তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু হল রিলায়েন্স হাউজিং ফাইনান্স, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস এবং রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইনান্স, যেগুলিকে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছিল। এই সমস্ত ঋণ পরে অনাদায়ী সম্পদে (NPA) পরিণত হয়। তদন্তকারী সংস্থার মতে, ঋণের টাকা নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়নি এবং সম্ভবত এটিকে অন্য কোম্পানিতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই কারণে মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যাংক আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি
ইডি এসবিআই, আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি, অ্যাক্সিস ব্যাংক সহ ১২টির বেশি ব্যাংকের কাছে ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া, গ্যারান্টি, নথি, ডিফল্ট টাইমলাইন এবং পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। সূত্র মারফত জানা গেছে, যদি ব্যাংকগুলির জবাব সন্তোষজনক না হয়, তাহলে ব্যাংক আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। এতে এটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ব্যাংকিং সিস্টেমের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
জাল গ্যারান্টি সংক্রান্ত নতুন তথ্য
ইডি-র তদন্তে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে যে আম্বানি গ্রুপের কোম্পানিগুলি সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (SECI)-কে ৬৮.২ কোটি টাকার জাল ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছিল। এই গ্যারান্টি রিলায়েন্স NU BESS লিমিটেড এবং মহারাষ্ট্র এনার্জি জেনারেশন লিমিটেডের নামে জারি করা হয়েছিল, যা আম্বানির এডিএজি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই গ্যারান্টিকে আসল প্রমাণ করার জন্য একটি জাল ডোমেইন 's-bi.co.in' ব্যবহার করা হয়েছিল, যা দেখতে এসবিআই-এর আসল ডোমেইন 'sbi.co.in'-এর মতো। ইডি ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ অফ ইন্ডিয়া (NIXI)-এর কাছে এই জাল ডোমেইনের প্রযুক্তিগত তথ্য জানতে চেয়েছে যাতে এটা জানা যায় যে এটি কে রেজিস্টার করেছে এবং কবে সক্রিয় করা হয়েছে।
৫০টি কোম্পানি এবং ২৫ জন ব্যক্তি নজরে
ইডি-র এপর্যন্ত অভিযানে মুম্বাই, দিল্লি, হায়দ্রাবাদ সহ ৩৫টির বেশি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এই তল্লাশিতে একাধিক ডিজিটাল নথি, কম্পিউটার, আর্থিক রেকর্ড, মোবাইল ডেটা এবং ইমেল যোগাযোগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তে ৫০টি কোম্পানি এবং ২৫ জনের বেশি ব্যক্তিকে পিএমএলএ (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট)-এর অধীনে সন্দেহভাজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
অনিল আম্বানিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং লুক আউট সার্কুলার
অনিল আম্বানিকে ৫ আগস্ট ইডি-র সামনে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে লুক আউট সার্কুলার (LOC) জারি করা হয়েছে যাতে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। ইডি আশা করছে যে আম্বানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফান্ড ট্রান্সফারের শিকল, বিদেশি বিনিয়োগ এবং শেল কোম্পানিগুলির সঙ্গে জড়িত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
আর্থিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতার উপর বড় প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এত বড় আকারে জালিয়াতি হয়ে থাকে, তাহলে এটা শুধু কর্পোরেট দুর্নীতি নয়, বরং ব্যাংকিং এবং অডিটিং সিস্টেমেরও ব্যর্থতা। একজন প্রাক্তন ব্যাংক পরিচালকের মতে, 'যদি ব্যাংক গ্যারান্টি জাল ছিল এবং ডোমেইনটি নকল ছিল, তাহলে অনুমোদনকারী কর্মকর্তারা কীভাবে এটি ধরতে পারলেন না? এটা অবহেলা নয়, যোগসাজশ হতে পারে।'
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ এবং সম্ভাব্য প্রভাব
ইডি এই তদন্তকে এবার আন্তর্জাতিক স্তরেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি কোনো বিদেশি লেনদেন বা শেল কোম্পানি সামনে আসে। এই মামলায় অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেমন সেবি, আরবিআই এবং এসএফআইও-ও যুক্ত হতে পারে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে অনিল আম্বানি এবং একাধিক ব্যাংক আধিকারিক গুরুতর আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে পারেন। এর ফলে কর্পোরেট গভর্নেন্স নিয়েও দেশব্যাপী বিতর্ক শুরু হতে পারে।