বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এন্থেম বায়োসায়েন্সেস-এর আইপিও-তে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইস্যু খোলার প্রথম দিনেই এর ৭৭ শতাংশ অংশ পূরণ হয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সম্পূর্ণ ইস্যুটি অফার ফর সেল (OFS)-এর অধীনে আসছে, অর্থাৎ এতে কোনো নতুন শেয়ার जारी করা হচ্ছে না। কোম্পানির বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররাই এতে তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করছেন।
গ্রেস মার্কেট প্রিমিয়াম (GMP) জাগিয়েছে প্রত্যাশা
আইপিও খোলার সাথে সাথেই এর GMP অর্থাৎ গ্রে মার্কেট প্রিমিয়াম আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে যেখানে এর প্রিমিয়াম ইস্যু প্রাইস থেকে প্রায় ১৮ শতাংশ উপরে ছিল, এখন তা বেড়ে ২০.৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর মানে হল, বাজারে এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং মানুষ এর শেয়ার উচ্চ দামে কিনতে প্রস্তুত।
আইপিও-র আকার এবং সাবস্ক্রিপশন ডেটা
এন্থেম বায়োসায়েন্সেস-এর ইস্যু সাইজ হল ৪.৪ মিলিয়ন শেয়ার, যেখানে এখন পর্যন্ত ৩৩.৮৩ মিলিয়ন শেয়ারের জন্য বিড এসেছে। নন-ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের (NII) অংশে সবচেয়ে বেশি সাড়া দেখা গেছে, যেখানে ১১৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বিড এসেছে। অন্যদিকে, খুচরা বিনিয়োগকারীদের (Retail) মধ্যে এখনও কম আগ্রহ দেখা গেছে, যেখানে মাত্র ০.৬১ শতাংশ পূরণ হয়েছে। QIB (কোয়ালিফাইড ইনস্টিটিউশনাল বায়ার) অংশে ৩৭ শতাংশ সাবস্ক্রিপশন হয়েছে।
প্রাইস ব্যান্ড এবং লট সাইজ কী?
আইপিও-র জন্য কোম্পানি প্রতি শেয়ারের মূল্য ৫৪০ থেকে ৫৭0 টাকার মধ্যে নির্ধারণ করেছে। বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে একটি লট, অর্থাৎ ২৬টি শেয়ারের জন্য আবেদন করতে হবে। এর মানে হল, সর্বনিম্ন বিনিয়োগ প্রায় ১৪,৮২০ টাকা হবে। তালিকাভুক্তি (Listing) NSE এবং BSE উভয় এক্সচেঞ্জেই হবে।
কোম্পানির পটভূমি এবং ব্যবসার মডেল
এন্থেম বায়োসায়েন্সেস-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে। এই কোম্পানি ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের CRDMO (Contract Research, Development and Manufacturing Organization) বিভাগে কাজ করে। এই কোম্পানি ওষুধ আবিষ্কার, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে সক্রিয়। ভারতে এমন কিছু কোম্পানি আছে যারা ছোট এবং বড় উভয় ধরনের অণুর (molecules) উপর একসঙ্গে কাজ করে, এবং এন্থেম তাদের মধ্যে অন্যতম।
FY25-এ শক্তিশালী পারফরম্যান্স
আর্থিক দিক থেকে কোম্পানি অর্থবর্ষ ২০২৫-এ শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এর EBITDA মার্জিন ছিল ৩৬.৮ শতাংশ এবং রিটার্ন অন নেট ওয়ার্থ (RoNW) ছিল ২০.৮ শতাংশ। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কোম্পানির মোট নেট ওয়ার্থ ছিল ২৪১০ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যানগুলি কোম্পানির আয় এবং লাভজনকতার স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
গ্লোবাল রেগুলেটরি অ্যাপ্রুভাল এবং সম্প্রসারণের পরিকল্পনা
কোম্পানির উৎপাদন ইউনিটগুলি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। এগুলি USFDA, ANVISA, TGA এবং PMDA-এর মতো বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি থেকে অনুমোদন পেয়েছে। কোম্পানি ভবিষ্যতে ফার্মেন্টেশন এবং সিন্থেসিস ক্যাপাসিটি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যাতে বায়োলজিক্স এবং স্পেশালিটি ইনগ্রেডিয়েন্টগুলির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা যায়।
ভ্যালুয়েশন এবং অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির সাথে তুলনা
FY25-এর আয়ের ভিত্তিতে কোম্পানির P/E অনুপাত ৭১x। এর তুলনায়, Syngene-এর P/E ৫1 এবং Divi’s Labs-এর প্রায় ৮3। অর্থাৎ, এন্থেম বায়োসায়েন্সেস-এর ভ্যালুয়েশন সেই কোম্পানিগুলির মধ্যে আসে যারা ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্ত এবং শক্তিশালী উপস্থিতি সম্পন্ন।
বাজারে আস্থা বাড়ছে, বিশ্লেষকদেরও শক্তিশালী নজর
অনেক ব্রোকারেজ ফার্ম, যেমন আনন্দ রাঠি এবং ক্যানারা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এই আইপিও নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। উভয় সংস্থাই এটি "সাবস্ক্রাইব" করার সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, কোম্পানির ব্যবসার মডেল, প্রযুক্তি এবং লাভের বৃদ্ধি এটিকে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী করে তোলে।
আবেদনের শেষ দিন ১৬ জুলাই
আইপিও-র আবেদনের শেষ তারিখ ১৬ জুলাই, অর্থাৎ যে বিনিয়োগকারীরা এখনও আবেদন করেননি, তাঁদের জন্য আজ এবং আগামীকাল সময় রয়েছে। কোম্পানির ট্র্যাক রেকর্ড, গ্লোবাল ক্লায়েন্ট বেস এবং GMP-এর দ্রুত উত্থান বাজারের আগ্রহ তৈরি করেছে।