শ্রাবণ মাসে ঘুরে আসুন প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত ৫টি শিবধামে

শ্রাবণ মাসে ঘুরে আসুন প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত ৫টি শিবধামে

শ্রাবণ মাসে শিবভক্তরা অত্যন্ত ভক্তিভরে প্রতি সোমবার ভোলেবাবার দর্শন করতে মন্দিরগুলির দিকে যান। এমন অবস্থায়, আপনিও যদি এই বছর কিছু বিশেষ স্থানে যেতে চান, তাহলে দেশের এই ৫টি সবুজ শিবধাম একদম সঠিক। এখানে ভক্তির সঙ্গে সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝর্ণা এবং শান্ত পরিবেশ সবকিছুই পাবেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, শ্রাবণ ২০২৫-এ কোথায় কাটানো যেতে পারে শান্তির শিব যাত্রা।

শ্রাবণে বাড়ে শিবভক্তি

প্রতি বছর শ্রাবণ মাস শিবভক্তদের জন্য খুবই বিশেষ। ২০২৫ সালে শ্রাবণ ১০ই জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এই সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ সোমবার দিন শিব মন্দিরে জল নিবেদন ও পূজা-অর্চনার জন্য যান।

শ্রাবণ শুধু পূজার মাস নয়, বরং ঘোরাঘুরিরও একটা ভালো সুযোগ। বিশেষ করে সেই মন্দিরগুলোর কথা যদি বলি, যেগুলি প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত। চলুন, আপনাকে জানাই সেই ৫টি শিবধামের কথা, যেখানে আপনি এই শ্রাবণ সোমবারে যেতে পারেন এবং ভক্তির সাথে প্রকৃতির আনন্দও উপভোগ করতে পারেন।

১. ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ, নাসিক

কোথায়: নাসিক, মহারাষ্ট্র
বিশেষত্ব: গোদাবরী নদীর তীরে, পাহাড় এবং জঙ্গল দ্বারা পরিবেষ্টিত

নাসিকের ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম। এই মন্দির সহ্যাদ্রির পাহাড়ের কাছে অবস্থিত এবং বর্ষাকালে চারদিকে সবুজ আর সবুজ দেখা যায়। শ্রাবণে এখানে প্রচুর ভিড় হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানকার শান্তি ও বাতাস অন্যরকম অনুভূত হয়।

কাছেই গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল, ব্রহ্মগিরি পাহাড় এবং অঞ্জনেরি গ্রামের মতো ঘোরার জায়গা আছে।

২. বৈদ্যনাথ মন্দির, হিমাচল প্রদেশ

কোথায়: কাংড়া জেলা, হিমাচল
বিশেষত্ব: হিমালয়ের কোলে অবস্থিত, ১৩ শতাব্দীর মন্দির

হিমাচলের বৈজনাথ শহরে অবস্থিত এই মন্দিরটি খুবই প্রাচীন এবং শিব ভক্তদের জন্য অত্যন্ত বিশেষ বলে মনে করা হয়। বর্ষাকালে মেঘ, সবুজ আর পাহাড়ের মাঝে এই মন্দিরটিকে কোনো সিনেমার দৃশ্যের মতো লাগে।

এখানে শান্ত পরিবেশ ও ঠান্ডা বাতাস প্রত্যেককে আকর্ষণ করে। আপনি যদি গরমে অতিষ্ঠ হন, তাহলে শ্রাবণে এখানে ভ্রমণ আপনার জন্য খুবই আরামদায়ক হতে পারে।

৩. ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ, ঔরঙ্গাবাদ

কোথায়: ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র
বিশেষত্ব: ইলোরার গুহাগুলির কাছে, শেষ জ্যোতির্লিঙ্গ

এই শিবধাম ইলোরার বিখ্যাত গুহাগুলির কাছে অবস্থিত এবং এটিকে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে পূজা করা হয়। শ্রাবণে এখানকার আবহাওয়া খুবই মনোরম থাকে এবং মন্দিরের চারপাশে সবুজের আচ্ছাদন দেখা যায়।

পুরো মন্দির এলাকায় পূজার বিশেষ পরিবেশ থাকে এবং এখানকার শান্তি মনকে খুব আকৃষ্ট করে।

৪. অযোধ্যার শিব মন্দির

কোথায়: অযোধ্যা, উত্তর প্রদেশ
বিশেষত্ব: দুটি প্রধান শিব মন্দির — নাগেশ্বরনাথ এবং পঞ্চমুখী মহাদেব

ভগবান রামের শহর অযোধ্যায়ও শিবের অনেক প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরনাথ মন্দির রামের পায়ে কাছে, যেখানে পঞ্চমুখী মহাদেব মন্দির সরযু নদীর তীরে গুপ্তার ঘাটে অবস্থিত।

শ্রাবণে এখানে খুব ভিড় থাকে। সবুজ এবং নদীর তীর এই স্থানটিকে আরও বিশেষ করে তোলে।

এখানে পরিবেশ খুবই শান্ত থাকে এবং পূজার সময় মন্দিরে ঘণ্টা ও শঙ্খের আওয়াজ পুরো পরিবেশকে ভক্তিপূর্ণ করে তোলে।

৫. নীলকণ্ঠ মহাদেব, ঋষিকেশ

কোথায়: পাউরি গড়ওয়াল, উত্তরাখণ্ড
বিশেষত্ব: পাহাড়, ঝর্ণা ও জঙ্গলের মাঝে

নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির ঋষিকেশ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মন্দির সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। পথে পাহাড়ী পথ, ঝর্ণা এবং ঘন জঙ্গল আসে, যা রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্যও চমৎকার।

বিশ্বাস করা হয় যে এখানেই ভগবান শিব সমুদ্র মন্থনের বিষ পান করে তা নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। এই কারণে তাকে নীলকণ্ঠ বলা হয়।

শ্রাবণে এখানে ভক্তদের ভিড় হয় এবং পথটা যদিও কঠিন, তবুও যে অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় তা অসাধারণ হয়।

শিবধামগুলির যাত্রা: শান্তি ও শক্তির অভিজ্ঞতা

এই পাঁচটি শিবধামের বিশেষত্ব হল যে এগুলি কেবল মন্দির নয়, প্রকৃতির মাঝে এমন স্থান যেখানে মন শান্তি পায়। শ্রাবণে একদিকে বৃষ্টিতে সবুজ ভরে ওঠে, অন্যদিকে ভক্তির পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে মনকে বেঁধে রাখে।

আপনি যদি এই শ্রাবণে কোনো বিশেষ স্থানে দর্শনের জন্য যেতে চান, তাহলে এই সবুজ শিবধামগুলিকে অবশ্যই আপনার তালিকায় রাখুন। এই স্থানগুলি আপনাকে ভক্তি এবং প্রকৃতি উভয়েরই শান্তি দেবে। এই তথ্যটি আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন, যাতে তারাও এই অভিজ্ঞতার অংশ হতে পারে।

Leave a comment