ভারত শক্তি ক্ষেত্রে এমন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, যা কয়েক বছর আগেও কল্পনাতীত ছিল। প্যারিস চুক্তিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, ভারত তা পাঁচ বছর আগেই স্পর্শ করেছে। ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে, ভারত তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫০.০৮ শতাংশ অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে অর্জন করেছে।
এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে ভারত এখন কেবল জলবায়ু চুক্তির অনুসারী দেশ নয়, বরং বিশ্বকে পথ দেখানোর নেতৃত্বদাতা হয়ে উঠেছে।
৪৮৪.৮২ গিগাওয়াটের মধ্যে ২৪২.৭৮ গিগাওয়াট এখন সবুজ
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৮৪.৮২ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ২৪২.৭৮ গিগাওয়াট শক্তি এখন এমন উৎস থেকে আসছে যা প্রকৃতিগতভাবে নবায়নযোগ্য বা কার্বন মুক্ত।
বিস্তারিত তথ্য নিম্নরূপ:
- নবায়নযোগ্য শক্তি: ১৮৪.৬২ গিগাওয়াট
- বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: ৪৯.৩৮ গিগাওয়াট
- পারমাণবিক শক্তি: ৮.৭৮ গিগাওয়াট
- তাপবিদ্যুৎ (কয়লা, গ্যাস, ডিজেল): ২৪২.০৪ গিগাওয়াট
বর্তমানে ভারতের ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ এমন যা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটায় না।
সরকারি প্রকল্পের প্রভাব
এই সাফল্যের পেছনে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্প প্রধান ভূমিকা পালন করেছে:
- পিএম-কুসুম যোজনা: কৃষকদের সৌর পাম্প এবং এগ্রোভোল্টিক সিস্টেমের মাধ্যমে শক্তি স্বনির্ভর করার উদ্যোগ
- সোলার পার্ক যোজনা: বৃহৎ আকারে গ্রিড-সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন
- ন্যাশনাল উইন্ড-সোলার হাইব্রিড পলিসি: বায়ু এবং সৌর শক্তিকে একত্রিত করে সর্বাধিক উৎপাদন
- রুটটপ সোলার যোজনা: ঘরে ঘরে সৌর প্ল্যান্ট স্থাপন করে সরাসরি উৎপাদন এবং ব্যবহারের মডেল তৈরি
- বায়োএনার্জি মিশন: কৃষি বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করা
এই প্রকল্পগুলি কেবল গ্রামীণ ভারতে পরিচ্ছন্ন শক্তি পৌঁছে দেয়নি, বরং শিল্প ও শহরাঞ্চলেও এর প্রভাব সুস্পষ্ট হয়েছে।
২০৪৭ সালের লক্ষ্যের দিকে শক্তিশালী পদক্ষেপ
ভারত বর্তমানে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি স্বনির্ভর ও সবুজ ভারতের লক্ষ্যের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত প্রযুক্তি, নীতি এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব জলবায়ু নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে।
সৌর মডিউল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা, গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন এবং দেশীয় শক্তি সঞ্চয় প্রযুক্তিগুলির উপর অবিরাম কাজ দেশকে এমন এক দিকে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে ভবিষ্যতে জ্বালানি আমদানির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে এবং রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়বে।
বিশ্বের দৃষ্টি এখন ভারতের দিকে
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০-৪৫ শতাংশ সবুজ শক্তি ক্ষমতার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। যেখানে ভারত এটি ২০২৫ সালেই অতিক্রম করে দেখিয়েছে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পরিকল্পনা এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুই অসম্ভব নয়।
এটা স্পষ্ট যে ভারত এখন জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসারীর পরিবর্তে একজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে ৬০-৭০ শতাংশ সবুজ শক্তি ক্ষমতার দিকে যাওয়া, তবে আপাতত, দেশ এই মাইলফলকে উদযাপন করতে পারে যে সবুজ ভবিষ্যৎ এখন স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।