আশিয়ানা হাউজিং: একটি সম্ভাব্য মাল্টিব্যাগার স্টক?

আশিয়ানা হাউজিং: একটি সম্ভাব্য মাল্টিব্যাগার স্টক?

আমাদের সকলেরই স্বপ্ন থাকে নিজের একটি বাড়ি, একটি এমন আশ্রয় যেখানে আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারব। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে সাহায্য করে দেশের অনেক রিয়েল এস্টেট এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

ভারতীয় রিয়েল এস্টেট সেক্টর গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে এবং এই সময়ের মধ্যে কিছু কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে স্থায়িত্ব এবং উন্নয়ন দেখিয়েছে। এর মধ্যেই একটি নাম হল আশিয়ানা হাউজিং লিমিটেড। এই কোম্পানি কেবল বাড়ি তৈরিতে দক্ষ নয়, বিনিয়োগের দিক থেকেও একটি চমৎকার বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। যদি আপনিও সেইসব লোকদের মধ্যে থাকেন যারা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ নিয়ে গুরুতর বা এমন কোনও স্টকের সন্ধান করছেন যা মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদী ভালো রিটার্ন দিতে পারে, তাহলে আশিয়ানা হাউজিং-এর দিকে নজর দেওয়া জরুরি হতে পারে।

কোম্পানির যাত্রা এবং বর্তমান অবস্থা

আশিয়ানা হাউজিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে এবং এর সদর দপ্তর নয়াদিল্লিতে অবস্থিত। কোম্পানির ফোকাস প্রধানত মিড-ইনকাম গ্রুপের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের এবং উচ্চমানের আবাসিক প্রকল্পগুলিতে ছিল। বিশেষ কথা হল, এই কোম্পানি সিনিয়র লিভিং অর্থাৎ বৃদ্ধদের জন্য তৈরি বিশেষ আবাসিক প্রকল্পে অগ্রণী হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি কোম্পানি জয়পুরে দুটি, গুরুগ্রামে একটি এবং চেন্নাইয়ে একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প চালু করেছে। চেন্নাইয়ের প্রকল্পটি বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কোম্পানির লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে টায়ার-২ এবং টায়ার-৩ শহরগুলিতে তাদের সিনিয়র লিভিং পোর্টফোলিও আরও সম্প্রসারণ করা।

আর্থিক কর্মক্ষমতা এবং পরিসংখ্যান

মার্কেট ক্যাপিটেলাইজেশনের দিক থেকে আশিয়ানা হাউজিং এখন প্রায় ৩২৬৪ কোটি টাকার কোম্পানি হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে কোম্পানির পারফরম্যান্স প্রশংসনীয় ছিল। গত বছরের একই ত্রৈমাসিকের তুলনায় কোম্পানির বিক্রি ১৩৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

এইভাবে কোম্পানির অপারেটিং প্রফিট অর্থাৎ EBITDA গত বছর ১৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৮ কোটি টাকা হয়েছে। যদিও এই বৃদ্ধি নগণ্য, তবে স্থায়িত্ব এবং ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের দিকে এটি একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।

এছাড়াও কোম্পানির নেট প্রফিট (PAT) ১১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০ কোটি টাকা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ভালো ইঙ্গিত হতে পারে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য

আশিয়ানা হাউজিং-এর লক্ষ্য ২০২৫ সালের শেষের মধ্যে তাদের টার্নওভার ৫২৯ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ কোটি টাকায় পৌঁছানো। এর জন্য কোম্পানি পনভেল, দিল্লি এনসিআর এবং বেঙ্গালুরু জাতীয় প্রধান শহরগুলিতে নতুন প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনার উপর কাজ করছে।

সিনিয়র লিভিং সেগমেন্টে কোম্পানির দখল শক্তিশালী হচ্ছে এবং যেমন ভারতে বৃদ্ধ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই সেগমেন্টে অপার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আশিয়ানা এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করছে।

বিনিয়োগের দিক থেকে কতটা লাভজনক এই স্টক

বর্তমানে আশিয়ানা হাউজিংয়ের স্টক প্রায় ৩৩৫ টাকার কাছাকাছি ব্যবসা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই শেয়ার ৩০০ টাকা বা তার নিচে পর্যায়ে পাওয়া যায়, তাহলে এটি একটি ভালো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের বিকল্প হতে পারে।

মুম্বাই-স্থিত সেবি থেকে নিবন্ধিত বিনিয়োগ পরামর্শদাতা ফার্ম ক্লাইম্ব ক্যাপিটালের মতে আশিয়ানা হাউজিং-এ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বেশ লাভজনক হতে পারে। ক্লাইম্ব ক্যাপিটাল মূলত ছোট এবং মাঝারি আকারের মার্কেট ক্যাপ স্টকসের উপর নজর দেয় এবং তাদের কথা হল, এই স্টক আগামী সময়ে ধারাবাহিকভাবে রিটার্ন দিতে পারে।

ঝুঁকি এবং সতর্কতা

যদিও কোম্পানির পরিকল্পনা এবং উন্নয়নের হার উৎসাহজনক, তবে বিনিয়োগকারীদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে রিয়েল এস্টেট সেক্টর চক্রীয় এবং এতে উত্থান-পতন আশা করা যায়। এছাড়াও, আশিয়ানার অধিকাংশ ফোকাস বিশেষ সেগমেন্ট যেমন সিনিয়র লিভিং-এর উপর, যা বৃহৎ পরিসরে এখনও উন্নত হচ্ছে।

যে কোনও বিনিয়োগের মতো, এতেও ঝুঁকি আছে এবং বিনিয়োগকারীকে নিজের ঝুঁকি প্রোফাইল অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কি হতে পারে এটি পরবর্তী মাল্টিব্যাগার

মাল্টিব্যাগার হওয়ার সম্ভাবনা তখনই তৈরি হয় যখন কোম্পানির কাছে স্পষ্ট উন্নয়নের কৌশল, স্থায়ী নেতৃত্ব, শক্তিশালী আর্থিক এবং ক্রমাগত বৃদ্ধিমান চাহিদা থাকে। আশিয়ানা হাউজিং এই সমস্ত মানদণ্ডে এখনকার জন্য একটি সম্ভাব্য দাবীদার বলে মনে হচ্ছে।

সিনিয়র লিভিং-এ দ্রুত বর্ধমান চাহিদা এবং কোম্পানির স্পষ্ট পরিকল্পনা এটিকে একটি আলাদা পরিচয় দেয়। এছাড়াও, মেট্রো শহরের বাইরের বাজারকে লক্ষ্য করা আশিয়ানাকে একটি আলাদা সুবিধাও দিতে পারে।

Leave a comment