মিউচুয়াল ফান্ডে এক্সিট লোড: বিনিয়োগের আগে জানা জরুরি

মিউচুয়াল ফান্ডে এক্সিট লোড: বিনিয়োগের আগে জানা জরুরি

এক্সিট লোড হল সেই ফি যা মিউচুয়াল ফান্ড থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে টাকা তুললে (রিডিম করলে) ধার্য করা হয়।

যখন কোনো বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ করেন, তখন তিনি মনে করেন যে প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি যে কোনো সময় টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু এমনটা করার সময় কিছু স্কিমে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়, যাকে 'এক্সিট লোড' বলা হয়। এই চার্জটি তখন লাগে যখন কোনো বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট সময়সীমার আগেই তাঁর বিনিয়োগ রিডিম করেন। এই সময়সীমা বিভিন্ন ফান্ড স্কিমের ভিত্তিতে ভিন্ন হয়, যেমন ৬ মাস, ১ বছর বা তার বেশি।

এক্সিট লোড আসলে কী

এক্সিট লোড এক প্রকার জরিমানা যা ফান্ড হাউস সেই পরিস্থিতিতে ধার্য করে যখন বিনিয়োগকারী দ্রুত টাকা তুলে নেয়। মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলি চায় যে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে ফান্ডে থাকুক, যাতে ফান্ড ম্যানেজাররা ভালো পরিকল্পনা করে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু যখন কোনো বিনিয়োগকারী সময়ের আগে টাকা তোলেন, তখন ফান্ড ম্যানেজারকে হঠাৎ করে নগদ টাকা জোগাড় করতে হয়, যার ফলে ফান্ডের ব্যবস্থাপনার উপর প্রভাব পড়ে। সেক্ষেত্রে, এক্সিট লোডের মাধ্যমে তারা এই অসুবিধার ক্ষতিপূরণ করে।

উদাহরণ দিয়ে বুঝি এক্সিট লোডের প্রভাব

ধরুন, আপনি ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন কোনো ফান্ডে এবং সেই ফান্ডে ১২ মাস পর্যন্ত টাকা ধরে রাখার শর্ত রয়েছে। যদি আপনি ৮ মাস পর টাকা তুলে নেন এবং সেই স্কিমে এক্সিট লোড ১ শতাংশ হয়, তাহলে আপনাকে ১ হাজার টাকা কেটে নেওয়ার পর ৯৯ হাজার টাকাই ফেরত দেওয়া হবে। অন্যদিকে, আপনি যদি ১২ মাস পূর্ণ করেন, তাহলে কোনো কাটছাঁট ছাড়াই পুরো টাকা ফেরত পাবেন। এটি ফান্ডের শর্তের উপর নির্ভর করে।

সব ফান্ডে এক্সিট লোড জরুরি নয়

এটা জরুরি নয় যে সব মিউচুয়াল ফান্ডে এক্সিট লোড থাকবে। অনেক স্কিমে কোনো এক্সিট লোড থাকে না, বিশেষ করে কিছু ডেবিট ফান্ড এবং দীর্ঘমেয়াদী ইক্যুইটি ফান্ডে। আবার কিছু ফান্ডে প্রথম ১ বছর পর্যন্ত এক্সিট লোড ধার্য করা হয় এবং তারপর আর হয় না। তাই বিনিয়োগ করার আগে ফান্ডের কাগজপত্র ভালোভাবে পড়া উচিত, যাতে পরে কোনো সমস্যা না হয়।

এক্সিট লোডের উদ্দেশ্য কী

ফান্ড হাউস এক্সিট লোডকে শুধুমাত্র একটি চার্জ হিসেবে নয়, বরং একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যবস্থা হিসেবেও দেখে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল বিনিয়োগকারীদের তাড়াহুড়ো করে টাকা তোলা থেকে বিরত রাখা। বাজারে পতন হলে অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা ঘাবড়ে যান এবং টাকা তুলে নেন। এক্সিট লোডের উপস্থিতি তাঁদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

ফান্ডের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে

যখন অনেক বিনিয়োগকারী হঠাৎ করে টাকা তুলে নেয়, তখন ফান্ডকে তাদের পোর্টফোলিও হোল্ডিং বিক্রি করতে হয়, যার ফলে ফান্ডের বাকি বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হতে পারে। এক্সিট লোডের মাধ্যমে ফান্ড হাউস সেইসব বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে যারা বারংবার টাকা বিনিয়োগ করেন এবং তোলেন। এর ফলে ফান্ডের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং ম্যানেজারকে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিয়ে কাজ করতে সুবিধা হয়।

এক্সিট লোডের পরিমাণ কত হতে পারে

এই চার্জ সাধারণত ০.২৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। কিছু বিশেষ স্কিম, যেমন আলট্রা শর্ট টার্ম ফান্ডে, এটি খুবই কম বা প্রায় থাকেই না। অন্যদিকে, ইক্যুইটি ফান্ডে এটি সামান্য বেশি হতে পারে, বিশেষ করে যদি স্কিমটি সক্রিয় ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।

নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য তথ্য জরুরি

নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এক্সিট লোড সম্পর্কে অবগত থাকা খুবই জরুরি। প্রায়ই দেখা যায়, লোকেরা না পড়েই বিনিয়োগ করে দেয় এবং প্রয়োজন হলে টাকা তোলার সময় কাটছাঁট দেখে অবাক হয়। তাই বিনিয়োগের আগে ফান্ডের নথিতে এক্সিট লোড সম্পর্কিত তথ্য অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত।

Leave a comment