সরকার সোডা অ্যাশ এবং লো-অ্যাশ মেটালার্জিক্যাল কোকের আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরও ছয় মাসের জন্য বাড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব অনেক কোম্পানির উপর পড়তে পারে, কিছু লাভবান হবে, আবার কারো কারো উপর নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। বিস্তারিত জানতে নিচে পড়ুন।
কেন্দ্র সরকার সোডা অ্যাশ এবং লো-অ্যাশ মেটালার্জিক্যাল কোকের আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরও ছয় মাসের জন্য বাড়িয়েছে। এখন এই নিষেধাজ্ঞা ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ডিরেক্টর জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (DGFT) ৩০শে জুন এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের পরে, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির শেয়ারে অস্থিরতা দেখা গেছে।
আমদানি কোটা এবং মূল্য নির্ধারণ
১লা জুলাই থেকে ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত, সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে কোটার ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি দেবে। এতে মোট ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও, ডাইসোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডা অ্যাশের জন্য সর্বনিম্ন আমদানি মূল্য প্রতি টনে ২০,১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হার আগে ৩০শে জুন পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল, যা এখন বছরের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সোডা অ্যাশ কোম্পানিগুলির উপর প্রভাব
সোডা অ্যাশ প্রধানত কাঁচ, ডিটারজেন্ট এবং রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ভারতে টাটা কেমিক্যালস, জিএইচসিএল (গুজরাট হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড), ডিসিডব্লিউ লিমিটেড এবং গুজরাট অ্যালকালিজ অ্যান্ড কেমিক্যালসের মতো কোম্পানিগুলি সোডা অ্যাশ উৎপাদন করে। সরকারের আমদানি সীমিত করার সরাসরি সুবিধা এই দেশীয় উৎপাদকরা পাবে।
১লা জুলাই বাজার খোলার পরে, টাটা কেমিক্যালস বাদে অন্যান্য সমস্ত স্টকে প্রায় ১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন যে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং এই সংস্থাগুলির বিক্রি বাড়ানো সম্ভব।
মেটালার্জিক্যাল কোকের উপরও সীমা
অন্য একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে, সরকার লো-অ্যাশ মেটালার্জিক্যাল কোকের আমদানির সময়সীমাও বাড়িয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগে ৩০শে জুন, ২০২৫ পর্যন্ত ছিল, যা এখন ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সরাসরি ইস্পাত শিল্পের সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলির উপর পড়বে।
কোন কোন দেশ থেকে সীমিত আমদানি হবে
ভারত অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, জাপান, পোল্যান্ড, কাতার, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য থেকে আমদানির উপর কোটা নির্ধারণ করেছে। এই দেশগুলি থেকে জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে মোট ১৪,২৭,১৬৬ টন লো-অ্যাশ মেটালার্জিক্যাল কোক আমদানি করা যাবে।
ইস্পাত কোম্পানিগুলির উপর প্রভাব পড়তে পারে
মেটালার্জিক্যাল কোক ইস্পাত তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এমন পরিস্থিতিতে, আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব জেএসডব্লিউ স্টিল, বেদান্তা এবং আর্সেলরমিতাল নিপ্পন ইন্ডিয়ার মতো কোম্পানিগুলির উপর দেখা যেতে পারে। এই সংস্থাগুলির সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এবং উৎপাদন খরচ প্রভাবিত হতে পারে, কারণ তাদের এখন বিদেশ থেকে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সরবরাহকারীদের উপর নির্ভর করতে হবে।
দেশের অভ্যন্তর থেকে কেনাকাটা বাড়তে পারে
সরকারের উদ্দেশ্য হল ইস্পাত প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি যেন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মেটালার্জিক্যাল কোক ক্রয় করে। এই পদক্ষেপটি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে, এর ফলে সংস্থাগুলির খরচ সামান্য বাড়তে পারে কারণ অভ্যন্তরীণ কোকের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় আলাদা হতে পারে।
অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু
ভারত সরকার চীন, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং রাশিয়া থেকে আসা লো-অ্যাশ মেটালার্জিক্যাল কোকের আমদানির উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্তও শুরু করেছে। শিল্প সংস্থাগুলির অনুরোধের পরে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তদন্তের উদ্দেশ্য হল নিশ্চিত করা যে আমদানি করা কোক দেশীয় বাজারে ক্ষতি না করে।
শেয়ার বাজারে প্রভাব
এই সরকারি সিদ্ধান্তের পর ১লা জুলাই টাটা কেমিক্যালস, জিএইচসিএল এবং ডিসিডব্লিউ-এর মতো স্টকগুলিতে বৃদ্ধি দেখা গেছে। একই সময়ে, জেএসডব্লিউ স্টিল, বেদান্তার মতো সংস্থাগুলির শেয়ারে প্রাথমিক লেনদেনে চাপ দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে আগামী সপ্তাহগুলিতে সরকারের সরবরাহ সংক্রান্ত নির্দেশিকাগুলির উপর।