জিএসটি সংগ্রহে রেকর্ড: আট বছরে দ্বিগুণ রাজস্ব, স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা

জিএসটি সংগ্রহে রেকর্ড: আট বছরে দ্বিগুণ রাজস্ব, স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা

এপ্রিল ২০২৫-এ মাসিক জিএসটি সংগ্রহ রেকর্ড ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল, যেখানে মে মাসে তা কমে ২.০১ লক্ষ কোটি টাকা হয়। জুন মাসের পরিসংখ্যান মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে।

ভারতে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ার আট বছর হয়ে গেছে এবং এই সময়ে এর মাধ্যমে প্রাপ্ত রাজস্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক বছর ২০২৪-২৫-এ জিএসটি সংগ্রহ ২২.০৮ লক্ষ কোটি টাকার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এই সংখ্যাটি আর্থিক বছর ২০২০-২১-এর তুলনায় দ্বিগুণ, যখন এটি ছিল মাত্র ১১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা।

এপ্রিলে সর্বোচ্চ আদায়, মে মাসেও বজায় ছিল উৎসাহ

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২৫-এ জিএসটি সংগ্রহ ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা সহ মাসিক স্তরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড তৈরি করেছে। মে মাসেও এই সংগ্রহ ২.০১ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। জুন ২০২৫-এর পরিসংখ্যান এখনো আসেনি, তবে প্রাথমিক অনুমান বলছে যে এটিও ২ লক্ষ কোটির কাছাকাছি থাকতে পারে।

নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যায় ব্যাপক বৃদ্ধি

জিএসটির আওতাভুক্ত করদাতার সংখ্যাতেও ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০১৭ সালে যখন জিএসটি চালু করা হয়েছিল, তখন মাত্র ৬৫ লক্ষ করদাতা নিবন্ধিত ছিলেন। এখন এই সংখ্যা ১.৫১ কোটির বেশি হয়ে গেছে। অর্থাৎ, আট বছরে প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি হয়েছে।

গড় মাসিক সংগ্রহও বেড়েছে

বছর-বছর জিএসটির মাধ্যমে প্রাপ্ত গড় মাসিক আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আর্থিক বছর ২০২২-এ এটি ছিল ১.৫১ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২৪-এ বেড়ে ১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে এবং এখন ২০২৫-এ এই গড় ১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ট্যাক্স কাঠামো স্বচ্ছ হয়েছে

জিএসটির শুরুতে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন ট্যাক্স ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু ১ জুলাই ২০১৭ তারিখে জিএসটি চালু হওয়ার সাথে সাথে প্রায় ১৭টি ট্যাক্স এবং ১৩টি সেস একত্রিত করে একটি অভিন্ন ট্যাক্স ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। এর ফলে ব্যবসায়ী এবং কোম্পানিগুলির জন্য ট্যাক্স প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ এবং স্বচ্ছ হয়েছে।

সরকারি কোষাগারে স্বস্তি

সরকারের মতে, জিএসটির কারণে ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। এখন ট্যাক্স ব্যবস্থা কেবল প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী হয়নি, বরং এর মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধেও অনেকখানি সাফল্য এসেছে। ই-ইনভয়েস, ই-ওয়ে বিল এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত পদক্ষেপগুলি কর compliance-এ (অনুযায়ী হওয়া) বৃদ্ধি ঘটিয়েছে।

কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি একটি শক্তিশালী রাজস্ব ভিত্তি পাচ্ছে

জিএসটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে একটি যৌথ কর, যা উভয়কেই রাজস্ব প্রদান করে। কেন্দ্র সরকার যে অংশ পায়, তাকে CGST (সেন্ট্রাল জিএসটি) এবং রাজ্য সরকারগুলিকে SGST (স্টেট জিএসটি) বলা হয়। এছাড়াও কিছু কর IGST (ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি)-এর অধীনেও আদায় করা হয়, যা আন্তঃরাজ্য লেনদেনের উপর প্রযোজ্য হয়।

জিএসটি কাউন্সিল হারের সিদ্ধান্ত নেয়

ভারতে জিএসটির হার নির্ধারণের দায়িত্ব জিএসটি কাউন্সিলের (GST Council) উপর ন্যস্ত। এতে কেন্দ্র ও সকল রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন। এই পরিষদ সময়ে সময়ে ট্যাক্স স্ল্যাব এবং নিয়ম পরিবর্তন করে। বর্তমানে জিএসটির চারটি প্রধান হার রয়েছে: ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ। এছাড়াও কিছু পণ্য ও পরিষেবার উপর বিশেষ সেসও (cess) আরোপ করা হয়।

বছর অনুযায়ী কত সংগ্রহ হয়েছে

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে জিএসটি সংগ্রহে ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখা যায়:

  • ২০২০-২১: ১১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা
  • ২০২১-২২: ১৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা
  • ২০২২-২৩: ১৮.০৮ লক্ষ কোটি টাকা
  • ২০২৩-২৪: ২০.১৮ লক্ষ কোটি টাকা
  • ২০২৪-২৫: ২২.০৮ লক্ষ কোটি টাকা

এ থেকে স্পষ্ট যে গত পাঁচ বছরে জিএসটি সংগ্রহ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী সবাই যুক্ত

জিএসটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বৃহৎ উদ্যোগ পর্যন্ত সকলকে একই ট্যাক্স ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে কেবল ট্যাক্স প্রদান সহজ হয়নি, বরং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশেও স্বচ্ছতা এসেছে।

Leave a comment