সিএ ছাড়াই আয়কর রিটার্ন: সহজ পদ্ধতিতে ফাইল করার গাইড

সিএ ছাড়াই আয়কর রিটার্ন: সহজ পদ্ধতিতে ফাইল করার গাইড

আয়কর রিটার্ন (ITR) এখন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA)-এর সাহায্য ছাড়াই সহজে ফাইল করা যেতে পারে, যদি আপনার আয় সাধারণ শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে, যেমন ফর্ম 16 (যদি আপনি বেতনভোগী হন), ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিনিয়োগ সংক্রান্ত নথি, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং অন্য কোনো আয় থাকলে তারও তথ্য।

আয়কর রিটার্ন অর্থাৎ ITR ফাইল করা এখন আগের মতো কঠিন কাজ নয়। সরকার পোর্টাল এবং প্রক্রিয়াটিকে এত সহজ করে দিয়েছে যে সাধারণ চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এখন নিজেরাই আয়কর রিটার্ন পূরণ করতে পারেন। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য ITR ফাইল করার শেষ তারিখ এখন ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখনও আপনার হাতে সময় আছে, এবং আপনি চাইলে কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA)-এর সাহায্য ছাড়াই নিজের রিটার্ন ফাইল করতে পারেন।

যদি আপনি বেতনভোগী হন বা সাধারণ আয় রাখেন, তাহলে ITR ফাইল করা আপনার জন্য খুবই সহজ। নিচে দেওয়া পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনি নিজে থেকেই রিটার্ন পূরণ করতে পারেন।

কোন কোন কাগজপত্র আগে থেকে তৈরি রাখবেন

ITR ফাইল করার আগে কিছু প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করা জরুরি। এই কাগজপত্র আপনার আয় এবং ট্যাক্সের তথ্য স্পষ্টভাবে জানায়।

  • আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড
  • ফর্ম 16 (যদি আপনি চাকুরী করেন তবে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পাবেন)
  • ব্যাংক হিসাবের সম্পূর্ণ বিবরণ ও পাসবুক
  • পোস্ট অফিস বা ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ সার্টিফিকেট
  • সেকশন 80C, 80D বা NPS-এর মতো বিনিয়োগের রসিদ
  • ফর্ম 26AS এবং AIS স্টেটমেন্ট (এগুলি আয়কর ওয়েবসাইটে ডাউনলোড করা যেতে পারে)

ওয়েবসাইটে গিয়ে লগ ইন করুন

আয়করের ই-ফাইলিং ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এর লিঙ্ক হল – www.incometax.gov.in

  • এখানে ‘লগইন’ অপশনে ক্লিক করুন
  • ইউজার আইডি-তে আপনার প্যান নম্বর দিন
  • পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন
    যদি আপনি আগে রেজিস্ট্রেশন না করে থাকেন, তবে প্রথমে রেজিস্টার করুন

আপনার আয় অনুযায়ী ITR ফর্ম নির্বাচন করুন

প্রত্যেক করদাতার জন্য আলাদা ITR ফর্ম রয়েছে। আপনাকে আপনার আয় এবং পেশা অনুযায়ী ফর্ম নির্বাচন করতে হবে।

  • ITR-1: চাকরিজীবী বা পেনশন প্রাপক, যাদের মোট আয় ৫০ লক্ষের কম
  • ITR-2: যাদের মূলধন লাভ বা বিদেশি আয় আছে
  • ITR-3: ব্যবসা বা পেশা থেকে আয় করা ব্যক্তি
  • ITR-4: প্রিসাম্পটিভ ইনকাম স্কিমের অধীনে থাকা ব্যবসায়ী বা ফ্রিল্যান্সার

পোর্টালে লগইন করার পরে সঠিক ITR ফর্মের পরামর্শও পাওয়া যায়, যা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

অনলাইন ফাইলিং শুরু করুন

  • পোর্টালে লগইন করার পরে ‘e-File’ ট্যাবে যান
  • ‘Income Tax Return’ নির্বাচন করুন এবং তারপর ‘File Income Tax Return’-এ ক্লিক করুন
  • ২০২৫-২৬ অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার নির্বাচন করুন
  • অনলাইন মোড নির্বাচন করুন এবং তারপর ITR ফর্ম নির্বাচন করুন
  • আয়ের বিবরণ পূরণ করুন (বেশিরভাগ বিবরণ আগে থেকেই পূরণ করা থাকে, শুধু চেক এবং এডিট করতে হয়)
  • ট্যাক্স ডিডাকশন সেকশনে বিনিয়োগ বা ছাড়ের তথ্য দিন
  • যদি কোনো ট্যাক্স আগে থেকে কাটা হয়ে থাকে বা রিফান্ড পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে সেই তথ্যও দেখা যাবে

রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে যাচাই করুন

আপনি যে বিবরণগুলি পূরণ করেছেন, সেগুলি একবার মনোযোগ সহকারে পর্যালোচনা করুন।

  • ‘Preview Return’-এ ক্লিক করে পুরো রিটার্ন দেখুন
  • যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবে ‘Submit’ বোতামে ক্লিক করুন
  • কোনো ভুল দেখা গেলে, ফিরে গিয়ে ঠিক করুন

ই-ভেরিফিকেশন অবশ্যই করুন

রিটার্ন পূরণ করার পরেও কাজ শেষ হয় না। ই-ভেরিফিকেশন জরুরি, যাতে আয়কর বিভাগ নিশ্চিত হতে পারে যে আপনি নিজে ফাইল করেছেন।

ই-ভেরিফিকেশন করার বিকল্প:

  • আধার লিঙ্ক করা মোবাইল নম্বরে আসা OTP-এর মাধ্যমে
  • নেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে লগইন করে
  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-ভিত্তিক EVC-এর মাধ্যমে
  • যদি অনলাইনে যাচাই করতে না পারেন, তবে ITR-V প্রিন্ট করে স্বাক্ষর করুন এবং CPC, বেঙ্গালুরুতে পাঠান

ই-ভেরিফিকেশন ৩০ দিনের মধ্যে করা জরুরি, অন্যথায় রিটার্ন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

কেন প্রক্রিয়াটি সহজ হয়েছে

আয়কর বিভাগ গত কয়েক বছরে ফাইলিং প্রক্রিয়াটিকে ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তুলেছে। পোর্টালে ফর্মে অনেক তথ্য আগে থেকেই পূরণ করা থাকে। এছাড়াও, ফর্ম 26AS এবং AIS-এর মতো রিপোর্টও এখন অনলাইনে উপলব্ধ, যা ট্যাক্সদাতাদের আলাদাভাবে হিসাব করার প্রয়োজন কমিয়ে দিয়েছে। সমস্ত ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড এবং নিয়োগকর্তাদের থেকে আসা তথ্য এখন আপনার প্যানের সাথে যুক্ত থাকে এবং পোর্টালে প্রদর্শিত হয়। এবার সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে, যাতে মানুষ তাড়াহুড়ো করে কোনো ভুল না করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজে ফাইল করলে কোনো ফি লাগে না এবং কারও উপর নির্ভর করতে হয় না।

Leave a comment