হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি দেবশয়নীর একাদশী রূপে পালিত হয়। এই তিথিটি ভগবান বিষ্ণুর যোগনিদ্রা শুরুর সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কথিত আছে যে, এই দিন থেকে ভগবান বিষ্ণু ক্ষীর সাগরে চার মাসের শয়নাবস্থায় যান, যা চাতুর্মাস নামেও পরিচিত। এই সময়ে বিবাহ, মুন্ডন ইত্যাদি কোনও শুভ কাজ করা হয় না।
২০২৫ সালে দেবশয়নী একাদশীর ব্রত ৬ই জুলাই, রবিবার পালন করা হবে। এই বিশেষ দিনে ভগবান বিষ্ণুর পূজার পাশাপাশি, তুলসীর কিছু বিশেষ উপায় করলে জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে বলে মনে করা হয়।
তুলসীকে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ স্থান
তুলসী গাছ শুধু একটি সাধারণ গাছ নয়, বরং ধর্মীয় বিশ্বাসে এর স্থান দেবীর সমান বলে মনে করা হয়। শাস্ত্রে তুলসীকে শ্রীহরির প্রিয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁর প্রত্যেক পূজনে তুলসীর ব্যবহার অপরিহার্য।
দেবশয়নী একাদশীর দিনে তুলসী সংক্রান্ত কিছু উপায় করলে জীবনের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভ হয়।
তুলসীর কাছে প্রদীপ জ্বালানো
এই বিশেষ দিনে তুলসীর কাছে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা রয়েছে। এমন বিশ্বাস যে, তুলসীর পাশে প্রদীপ জ্বালালে ঘরের নেতিবাচক পরিবেশ দূর হয় এবং ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়। এই দিনে সন্ধ্যায় তুলসীর কাছে খাঁটি দেশি ঘি বা তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালানো হয়।
প্রদীপ জ্বালানোর সময় "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়" মন্ত্র জপ করা হয়। এছাড়াও তুলসীকে ৩ বা ৭ বার প্রদক্ষিণ করা উচিত। এই উপায় শান্তি, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
তবে, এই দিনে তুলসী পাতা ছেঁড়া উচিত নয় এবং তুলসীতে জলও অর্পণ করা উচিত নয়, কারণ এমন বিশ্বাস যে একাদশীর দিনে তুলসী মা নিজেও ব্রত পালন করেন এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজা করেন।
তুলসীতে লাল চুনরি অর্পণ করুন
দেবশয়নী একাদশীর দিনে তুলসীতে লাল রঙের চুনরি অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এটিকে ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মী উভয়ের কৃপা লাভের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই দিনে সকালে তুলসী গাছে স্নান করানোর পর তার উপর লাল চুনরি অর্পণ করুন। এছাড়াও ফুল, চাল, এবং প্রদীপ-ধূপ দিয়ে পূজা করুন। লাল চুনরি সুখ-সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
এমনটা করলে পারিবারিক জীবনে প্রেম বজায় থাকে এবং দাম্পত্য জীবনে আসা সমস্যাগুলি দূর হয়। অনেকের এমনও ধারণা যে, লাল চুনরি চড়ানো হলে ঘরে লক্ষ্মীর বাস হয় এবং আর্থিক সংকট দূর হয়।
তুলসীতে কलावा বাঁধুন
দেবশয়নী একাদশীর দিনে তুলসীতে কलावा অর্থাৎ রক্ষা সূত্র বাঁধাটাও একটি শুভ উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই উপায়টি বিশেষ করে মনোবাসনা পূরণের জন্য করা হয়।
সকালে তুলসী গাছের পূজা করে কलावा তিন বা সাতবার জড়িয়ে বাঁধতে হয়। কलावा বাঁধার সময় নিজের মনোবাসনা মনে মনে প্রকাশ করুন। বিশ্বাস করা হয়, এই উপায়ে আপনার ইচ্ছা পূরণ হয়।
যখন আপনার মনোবাসনা পূর্ণ হবে, তখন সেই কलावा খুলে কোনো পবিত্র নদী বা বহমান জলে প্রবাহিত করে দিতে হবে। এটি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সঙ্গে করলে ভগবান বিষ্ণু বিশেষভাবে প্রসন্ন হন।
তুলসীতে চন্দন ও ফুল অর্পণ করুন
এই দিনে তুলসী মাকে সাদা ফুল এবং চন্দন অর্পণ করাও শুভ ফলদায়ী বলে মনে করা হয়। সাদা ফুল শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, চন্দন ভগবান বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়।
চন্দন অর্পণ করলে মানসিক চাপ কমে এবং ঘরের পরিবেশ শান্ত থাকে। তুলসীতে যখন সাদা ফুল অর্পণ করা হয়, তখন ঘরোয়া পরিবেশে ইতিবাচক শক্তি বজায় থাকে এবং দুর্ভাগ্য দূর হয়।
তুলসীর কাছে বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করুন
দেবশয়নী একাদশীর দিনে তুলসীর কাছে বসে ভগবান বিষ্ণুর সহস্রনাম (হাজার নাম) পাঠ করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয়। এই পাঠে আত্মিক শান্তি পাওয়া যায় এবং ঘরে ধর্মীয় পরিবেশ বজায় থাকে।
বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ তুলসী মায়ের উপস্থিতিতে করলে তার প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়। যাদের কোষ্ঠীতে গ্রহ দোষ বা আর্থিক সমস্যা চলছে, তাদের এই উপায় অবশ্যই করা উচিত।
তুলসীতে জল অর্পণ করা থেকে বিরত থাকুন
একটি বিশেষ বিষয় এই দিনের জন্য মনে রাখতে হবে যে, দেবশয়নী একাদশীর দিনে তুলসীকে জল দেওয়া হয় না। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে তুলসী নিজে ব্রত পালন করেন এবং ভগবান বিষ্ণুর সেবায় মগ্ন থাকেন। তাই, তুলসীকে জল দেওয়া এই দিনে নিষিদ্ধ।