হিন্দু পঞ্জিকাতে অমাবস্যার তিথির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষ করে যখন এই তিথি শ্রাবণ মাসের মতো পবিত্র মাসে আসে। শ্রাবণ অমাবস্যাকে পিতৃ তর্পণ, দান, স্নান এবং শিব পূজার জন্য শুভ মনে করা হয়। এই দিনটি পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাঁদের আশীর্বাদ লাভের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে বিশেষ উপায়ে এবং পূজা-পার্বণের মাধ্যমে জন্ম-জন্মান্তরের পাপও দূর হতে পারে।
কবে সাवन অমাবস্যা ২০২৫?
২০২৫ সালে, সাवन অমাবস্যা ২৪শে জুলাই তারিখে পড়ছে। এই তিথি শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা, যা ‘হরিয়ালি অমাবস্যা’ নামেও পরিচিত। এই দিনটি প্রতি বছর হরিয়ালি তৃতীয়া থেকে তিন দিন আগে আসে।
অমাবস্যার তিথির সময়
সাवन অমাবস্যা ২০২৫, ২৪শে জুলাই সকাল ২টা ২৮ মিনিটে শুরু হয়ে ২৫শে জুলাই দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এই সময়ে যে কোনও সময় তর্পণ, স্নান, দান এবং পূজা করা শুভ বলে মনে করা হয়।
স্নান ও দানের শুভ মুহূর্ত
এই দিনে সকালবেলা স্নান, দান এবং পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, অমাবস্যার এই মুহূর্তগুলিতে পূজা বা তর্পণ করা অধিক ফলদায়ক।
- শুভ মুহূর্ত: সকাল ৫:৩৮ থেকে সকাল ৭:২০ পর্যন্ত
- চর মুহূর্ত: সকাল ১০:৩৫ থেকে দুপুর ১২:২৭ পর্যন্ত
- লাভ মুহূর্ত: দুপুর ১২:২৭ থেকে ২:১০ পর্যন্ত
এই সময়ে স্নান, পূজা এবং তর্পণ করা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
এবার গঠিত হচ্ছে দুর্লভ যোগ
সাवन অমাবস্যা ২০২৫-এ এবার অনেক শুভ যোগের সংযোগ ঘটছে, যা এটিকে আরও বিশেষ করে তুলছে।
- গুরু পুষ্য যোগ: ২৪শে জুলাই বিকেল ৪:৪৩ থেকে ২৫শে জুলাই সকাল ৫:৪৯ পর্যন্ত
- হর্ষণ যোগ: ২৩শে জুলাই দুপুর ১২:৩৪ থেকে ২৪শে জুলাই সকাল ৯:৫১ পর্যন্ত
- সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ: ২৪শে জুলাই সারাদিন
- অমৃত সিদ্ধি যোগ: ২৪শে জুলাই বিকেল ৪:৪৩ থেকে ২৫শে জুলাই সকাল ৫:৪৯ পর্যন্ত
এই যোগগুলিতে করা যে কোনও ধর্মীয় কাজ বহু গুণ ফলপ্রসূ হয়। বিশেষ করে দান, পূজা এবং পবিত্র কর্মের গুরুত্ব এই যোগগুলিতে আরও বৃদ্ধি পায়।
সাवन অমাবস্যায় কোন কাজগুলি পুণ্যদায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়
পিতৃ তর্পণ ও শ্রাদ্ধ কর্ম
এই দিনে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল তর্পণ, শ্রাদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ ভোজন করানোর প্রথা রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে এর মাধ্যমে পূর্বপুরুষরা প্রসন্ন হন এবং পিতৃ দোষ দূর হয়। অনেকে এই দিনে পবিত্র নদীতে স্নান করে তর্পণ করেন।
গাছ লাগানো এবং পিপল গাছের পূজা
সাवन অমাবস্যায় পিপল গাছ লাগানো এবং তার পূজা করা শুভ বলে মনে করা হয়। পিপল গাছে জল অর্পণ ও প্রদীপ জ্বালানো পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করে। এছাড়াও শিব-পার্বতীর কৃপা লাভ হয়।
শিব পূজা ও জলাভিষেক
এই দিনে শিবলিঙ্গে জল, দুধ এবং বেলপাতা অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। শ্রাবণ মাস ভগবান শিবের অত্যন্ত প্রিয়, তাই অমাবস্যায় শিবলিঙ্গের জলাভিষেক বিশেষ ফল দেয়।
অন্ন, বস্ত্র ও ধনের দান
গরীবদের অন্ন, বস্ত্র, তিল, গুড়, চাল ও দক্ষিণা দান করা এই দিনে অত্যন্ত পুণ্যদায়ক। এর ফলে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় এবং সকল প্রকার বাধা দূর হয়।
ব্রত ও মৌন সাধনা
কিছু ভক্ত এই দিনে ব্রত পালন করেন এবং মৌন থেকে ধ্যান করেন। এটি আত্মিক শুদ্ধতা এবং পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়।