কেন্দ্র-রাজ্যের সিদ্ধান্তে নতুন মর্যাদা, তবু সমস্যার পাহাড়
কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক ও রাজ্য সরকারের যৌথ সিদ্ধান্তে গত মাসেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের মর্যাদা এক ধাপ বাড়ানো হয়েছিল। ঘোষণা হয়েছিল, এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথির পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে থাকবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার আলাদা শাখা। এমনকি আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পথও খুলে দিয়েছিল এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদে দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা, যা গোটা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
পরিষদ অচল তিন বছরেরও বেশি, ক্ষোভে কেন্দ্র
সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের অবহেলার কারণে টানা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে অচল হয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদের কার্যক্রম। বোর্ডের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে কাজ হচ্ছে না, সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। এই দীর্ঘ প্রশাসনিক শূন্যতা নিয়ে আয়ুষ মন্ত্রক কড়া চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে— এই অচলাবস্থা শুধু অবহেলার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
অভিযোগ জমা পড়ল জাতীয় কমিশনে, চাপে রাজ্য
ক্ষুব্ধ হয়ে ‘বঙ্গীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সংঘ’ সম্প্রতি ন্যাশনাল কমিশন ফর ইন্ডিয়ান সিস্টেম অফ মেডিসিন (NCISM)-এর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে এনসিআইএসএম-এর বোর্ড অফ এথিক্স অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন-এর সভাপতি প্রফেসর রাজনী এ. নয়ার পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদের রেজিস্ট্রারের কাছে জরুরি ব্যাখ্যা চেয়েছেন। বোর্ড কেন অচল হয়ে আছে এবং এতদিন কোনো পদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়নি— সেই প্রশ্ন তুলেই রাজ্যের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে।
আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ, রাজ্যের উপর দায় চাপাল কমিশন
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, NCISM Act 2020 (Section 31(2)) অনুযায়ী রাজ্যের দায়িত্ব বোর্ডকে সচল রাখা। তা না হওয়ায় শুধু চিকিৎসক মহলই সমস্যায় পড়ছেন না, সাধারণ রোগীরাও সঠিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কমিশনের দাবি, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার সরাসরি উদাহরণ, যা দ্রুত সমাধান করা জরুরি। অন্যথায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চিকিৎসকদের ভোগান্তি, সাধারণ মানুষের ক্ষতি
রাজ্যের নানা প্রান্তের আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা অভিযোগ তুলেছেন— বোর্ডের অচলাবস্থার কারণে তাঁদের নিবন্ধন, পদোন্নতি, এমনকি প্রাথমিক প্রশাসনিক কাজও থমকে গেছে। ফলে পেশাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এর সরাসরি খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আয়ুর্বেদ পরিষেবা সঠিকভাবে চালু না থাকায় অনেক মানুষ বিকল্প চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রাজ্যের নীরবতা প্রশ্নের মুখে, জবাব চায় কেন্দ্র
২১ জুন ২০২২ থেকে বোর্ড কার্যত অচল থাকলেও রাজ্য সরকার এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে রাখা হয়েছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিশিষ্ট মহলের বক্তব্য— রাজ্য সরকারের উদাসীনতা দিনদিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আয়ুষ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই কড়া চিঠি দিয়ে জবাব চেয়েছে। এখন সবার নজর রাজ্যের প্রতিক্রিয়ার দিকে।
প্রশাসনের নীরবতা, চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কা
রাজ্যের আয়ুর্বেদ ডিরেক্টর ডাঃ দেবাশীষ ঘোষকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এই নীরবতা নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে চিকিৎসক সমাজে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত সমাধান না হয় তবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতেও তৈরি হবে চরম সংকট।
সাধারণ মানুষের খেসারত, নজর এখন রাজ্যের জবাবে
আজ রাজ্য প্রশাসনের উদাসীনতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পরিষেবা। প্রশ্ন উঠছে— এটি কি ইচ্ছাকৃত গাফিলতি, নাকি অযোগ্য প্রশাসনের নমুনা? যাই হোক না কেন, এর খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর তাই এখন সবার দৃষ্টি রাজ্যের উত্তরের দিকে— কীভাবে এবং কবে এই সমস্যার সমাধান করবে তারা, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে চিকিৎসক থেকে সাধারণ নাগরিকের মনে।