ইরানে B-2 বোমারের শেষ মিশনের পর আসছে B-21 রাইডার, প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত

ইরানে B-2 বোমারের শেষ মিশনের পর আসছে B-21 রাইডার, প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত

আমেরিকা ইরানকে আক্রমণ করে B-2 বোমারের শেষ বড় মিশন সম্পন্ন করেছে। আগামী পাঁচ বছরে এটি অবসর নেবে এবং তার স্থলাভিষিক্ত হবে B-21 রাইডার।

 B-21: 22 জুন, 2025-এর রাত 12:01 টায়, আমেরিকার মিসৌরিতে অবস্থিত হোয়াইট ম্যান এয়ারবেস থেকে মার্কিন বিমান বাহিনীর বিধ্বংসী B-2 বোমারু বিমানগুলো উড্ডয়ন করে। প্রায় 17 ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে বিমানগুলি মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন কমান্ড সেন্টারের সীমানায় প্রবেশ করে। এরপর সন্ধ্যায় তারা ইরানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে ফোরদো ও নাতাঞ্জের মতো প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আঘাত হানে।

বিমানগুলি প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয় এবং মিশনের সময় আকাশে তাদের জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। সন্ধ্যা 6:40 থেকে 7:05 এর মধ্যে হওয়া এই হামলায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে আমেরিকা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং আক্রমণাত্মক সামরিক শক্তি হিসাবে বিদ্যমান। হামলার কিছুক্ষণ পরেই আমেরিকা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

এবার অবসর নেবে B-2, আসছে B-21 রাইডার

হামলা চালানো B-2 বোমারু বিমানগুলোকে আমেরিকা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অবসর নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের স্থলাভিষিক্ত হবে B-21 রাইডার, যা আরও মারাত্মক, নির্ভুল এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। এটি ‘নেক্সট জেনারেশন স্টিলথ বোমার’, যা লং রেঞ্জ স্ট্রাইক বোমার (LRS-B) প্রোগ্রামের অধীনে তৈরি করা হয়েছে। এটির প্রথম ঝলক ডিসেম্বর 2022-এ প্রকাশ করা হয়েছিল এবং নভেম্বর 2023-এ এটি প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন করে।

B-21 রাইডার নামকরণের পেছনের গল্প

এই যুদ্ধবিমানের ‘রাইডার’ নামকরণের পেছনে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘ডুলিটল রাইডার্স’ নামক একটি দল জাপানে দুঃসাহসিক আক্রমণ চালিয়েছিল। সেই দলের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্মরণে B-21-এর নামকরণ করা হয়েছে ‘রাইডার’। এটি কেবল একটি নাম নয়, বরং মার্কিন সামরিক ঐতিহ্যের প্রতীক।

স্টিেলথ প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা

B-21 রাইডারকে স্টিলথ প্রযুক্তির দিক থেকে B-2-এর চেয়ে অনেক বেশি উন্নত করা হয়েছে। এর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে এটি যে কোনও দেশের রাডার সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে আক্রমণ করতে পারে। এর ককপিটের জানালা নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা রাডারের নজরদারি এড়াতে সাহায্য করবে। এই বিমানে অত্যাধুনিক এরোডাইনামিক্স ব্যবহার করা হয়েছে, যা এটিকে আকাশে অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং নির্ভুল করে তোলে।

ডুয়াল ক্যাপাবিলিটি প্ল্যাটফর্ম

B-21 কেবল একটি প্রচলিত বোমারু বিমান নয়। এটি পারমাণবিক অস্ত্রের পাশাপাশি প্রচলিত অস্ত্র বহন ও নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারে এবং শত্রুদের ঘাঁটিতে সুনির্দিষ্ট আঘাত হানতে পারে। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর দ্বৈত ক্ষমতা সম্পন্ন প্ল্যাটফর্ম, যা এটিকে বহুমুখী করে তোলে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং আধুনিক সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত

এই বিমানটি পরিচালনা করতে মাত্র দুইজন পাইলট প্রয়োজন - একজন পাইলট এবং একজন মিশন কমান্ডার। এটি ম্যানুয়াল এবং ফুল অটোমেটিক উভয় পদ্ধতিতেই ওড়ানো যেতে পারে। এর কম্পিউটারগুলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর সাহায্যে মিশন নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে মানুষের হস্তক্ষেপ কমে যায় এবং মিশনের নির্ভুলতা বৃদ্ধি পায়।

B-21-এর ডিজিটাল ক্ষমতা

এই বিমানের ডিজিটাল ওপেন-সিস্টেম ডিজাইন এটিকে ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আপগ্রেড করার যোগ্য করে তোলে। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল বিপদ ও যুদ্ধ কৌশল অনুযায়ী এতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই কারণেই B-21-কে ‘ফিউচার রেডি’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

तैनात और उत्पादन की योजना

মার্কিন বিমান বাহিনী প্রাথমিকভাবে প্রায় 100টি B-21 বিমান কিনছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যা 145 থেকে 200 পর্যন্ত হতে পারে। এই বিমানগুলো বিশেষভাবে সেইসব অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে যেখানে শত্রুদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দুর্ভেদ্য।

B-21 রাইডারের আক্রমণ ক্ষমতা

B-21 রাইডার শত্রুদের সীমানায় চুপিসারে প্রবেশ করে আক্রমণ করতে পারে এবং কারও নজরে না এসেই ফিরে আসতে পারে। এটি প্রায় 50,000 ফুট উচ্চতা থেকেও নির্ভুল বোমা হামলা করতে পারে। এর উইং স্প্যান প্রায় 132 ফুট এবং দৈর্ঘ্য প্রায় 54 ফুট। ডিজাইনে এর প্রতিচ্ছবি এবং রাডার ক্রস সেকশন সর্বনিম্ন রাখা হয়েছে, যা এটিকে ‘অদৃশ্য যোদ্ধা’ করে তোলে।

কেন B-21 রাইডার বিশেষ?

এই বিমানটি B-2-তে দেখা দেওয়া সমস্ত দুর্বলতা দূর করে। এটি দ্রুতগামী, নিরাপদ এবং টেকসই। এতে সফটওয়্যার ভিত্তিক মিশন কন্ট্রোল সিস্টেম রয়েছে, যা রিয়েল টাইমে কৌশল পরিবর্তন করতে সক্ষম। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও B-2-এর তুলনায় কম, যা এটিকে দীর্ঘমেয়াদী অপারেশনে আরও ব্যবহারিক করে তোলে।

Leave a comment