গোলাপী শহর জয়পুরে নগর নিগম তাদের কার্যকালের সমাপ্তির কয়েক দিন আগে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তা, মোড়, সেতু এবং পার্কের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নামকরণগুলি মহান ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বদের নামে করা হয়েছে।
জয়পুর: রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে নাম বদলের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়েছে। জয়পুর নগর নিগম (গ্রেটার) তাদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে শহরের প্রায় ৪০টি প্রধান স্থান – রাস্তা, মোড়, সেতু এবং পার্কের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেই সেতুটি নিয়ে, যা তিন বছর আগে ‘ভারত জোড়ো সেতু’ নামে পরিচিত ছিল। এখন এই সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘সর্দার প্যাটেল এলিভেটেড ব্রিজ’ রাখা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তটি জনসমক্ষে আসার সাথে সাথেই, বিজেপি এবং কংগ্রেস মুখোমুখি হয়েছে। কংগ্রেস এটিকে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পদক্ষেপ” বলে আখ্যা দিয়েছে, অন্যদিকে বিজেপি যুক্তি দিয়েছে যে এই পদক্ষেপটি “মহাপুরুষদের সম্মান জানানোর” জন্য নেওয়া হয়েছে।
নগর নিগমের শেষ বৈঠকে ৪০টি স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে
জয়পুর গ্রেটার নগর নিগমের শেষ বৈঠকে এই প্রস্তাবটি পাস করা হয়েছে। এর অধীনে ভারত জোড়ো এলিভেটেড ব্রিজের নাম এখন ‘লৌহ মানব সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল’-এর নামে রাখা হয়েছে। এছাড়াও, সেন্ট্রাল পার্ক এবং টঙ্ক রোডের নাম প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াতের নামে করা হয়েছে, যিনি রাজস্থানের রাজনীতিতে একটি বড় নাম ছিলেন।
একই বৈঠকে এটিও স্থির হয়েছে যে রামনিবাস বাগে নির্মিত স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নাম আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের নামে রাখা হবে। তিনটি প্রধান মোড়ের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে, যেগুলি এখন পরশুরাম সার্কেল, চিত্রগুপ্ত সার্কেল এবং খাতু শ্যাম সার্কেল নামে পরিচিত হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ: ব্যর্থতা লুকাতে চলছে ‘নাম বদলের রাজনীতি’

কংগ্রেস পার্টি নগর নিগমের এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলের বক্তব্য, বিজেপি সরকার তাদের কার্যকালে কোনো সুনির্দিষ্ট উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেনি, তাই তারা এখন নাম বদলের রাজনীতি করছে। রাজস্থান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং মিডিয়া ইনচার্জ স্বর্ণিম চতুর্বেদী বলেছেন,
'বিজেপি সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে শহরের নাম এবং স্থান পরিবর্তন করছে। ‘ভারত জোড়ো সেতু’-এর নাম পরিবর্তন করা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার ভাবাদর্শের উপর আক্রমণ, যা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার বার্তা দিত।'
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য যে ভারত জোড়ো সেতুটির নাম ২০২২ সালে অশোক গেহলট সরকার রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সম্মানে রেখেছিল, তাই এর পরিবর্তন “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা”-র মতো।
বিজেপির পাল্টা জবাব: মহাপুরুষদের সম্মানে রাখা হয়েছে নতুন নাম
কংগ্রেসের অভিযোগের জবাবে জয়পুর গ্রেটার নগর নিগমের মেয়র ডঃ সৌম্যা গুর্জর বলেছেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত রাজনীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়। নগর নিগম মহাপুরুষদের সম্মানে নাম পরিবর্তনের অধিকার রাখে। সর্দার প্যাটেল ভারতকে একত্রিত করার কাজ করেছিলেন, তাই ‘ভারত জোড়ো সেতু’-এর নাম তাঁর নামে রাখা যুক্তিযুক্ত।
তিনি আরও জানান যে সেন্ট্রাল পার্ক এবং টঙ্ক রোডের কোনো সরকারি নাম ছিল না। তাই রাজস্থানকে নতুন পরিচয় দানকারী ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াতের নামে সেগুলির নামকরণ করা হয়েছে। মেয়র সৌম্যা গুর্জরের মতে, নগর নিগমের বৈঠকগুলিতে কাউন্সিলররা জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রস্তাব রাখেন এবং সেই অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। তাঁর বক্তব্য, “এই ধরনের বিষয়গুলিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া উচিত নয়।”
রাজস্থানে নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রভাব
নাম পরিবর্তনের এই পদক্ষেপ রাজস্থানের রাজনীতিতে নতুন মোড় এনে দিয়েছে। রাজ্যে আসন্ন নগর নিগম নির্বাচন এবং বিধানসভা উপনির্বাচনের আলোচনার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত উভয় দলের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস এটিকে “বিজেপির প্রতীকী রাজনীতি” বলছে, অন্যদিকে বিজেপি এটিকে “সংস্কৃতি এবং জাতি গঠনে অবদানকারীদের সম্মান জানানোর” ঐতিহ্য হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে জয়পুরে এই বিতর্ক নির্বাচনী এজেন্ডা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ নাম পরিবর্তন এখন কেবল প্রশাসনিক নয়, এটি পরিচিতি এবং ভাবাদর্শের প্রতীক হয়ে উঠেছে।













