বাংলাদেশি মডেল গ্রেফতার কাণ্ডে চাঞ্চল্য জালিয়াতির আস্ত কারখানা চালাতেন মমতাজউদ্দিন!

বাংলাদেশি মডেল গ্রেফতার কাণ্ডে চাঞ্চল্য জালিয়াতির আস্ত কারখানা চালাতেন মমতাজউদ্দিন!

ভুয়ো লেটার হেডের কারখানা নিজের বাড়িতেই!

কলকাতা পুলিশের তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। শান্তা পাল নামে এক বাংলাদেশি মডেলকে গ্রেফতারের পর জাল নথি তৈরির বিশাল চক্রের সন্ধান মিলল। শেখ মমতাজউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের বাড়িতেই খুলে বসেছিলেন ভুয়ো লেটার হেড তৈরির অফিস। শুধু তাই নয়, একাধিক সরকারি দফতরের নাম ব্যবহার করে বানানো হতো জাল সার্টিফিকেট। বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধান থেকে কাউন্সিলর— কারও নাম বাদ যেত না।

সরকারি দফতরের রবার স্ট্যাম্পও প্রস্তুত!

মমতাজউদ্দিনের আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে সরকারি অফিসারদের নামে একাধিক রবার স্ট্যাম্প। এসব ব্যবহার করে বানানো হত এমন সব কাগজ, যেগুলি দেখে বিভ্রান্ত হতেন অনেকেই। এই জাল কাগজগুলির ভিত্তিতে আধার কার্ড, প্যান কার্ড এমনকি ভোটার কার্ড তৈরির কাজ চলত পুরোদমে। একাধিক এজেন্টকে নিয়োগ করেছিলেন তিনি, যাঁরা গ্রাহক জোগাড় করার দায়িত্বে ছিলেন।

আদালতের নির্দেশে ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত হেফাজতে

কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে মমতাজউদ্দিনকে পেশ করা হলে পুলিশ তাঁর ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত হেফাজতের আবেদন জানায়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। তদন্তকারীদের দাবি, এই সময়ের মধ্যেই চক্রের আরও সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মোবাইল নম্বর, অ্যাকাউন্ট ডিটেলস ও কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা শুরু করেছে পুলিশ।

শান্তা পালের কাছ থেকে উদ্ধার জাল ভারতীয় নথি

বাংলাদেশি মডেল শান্তা পাল কলকাতার এক অভিজাত এলাকায় বসবাস করছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ২০২০ সালে ইস্যু হওয়া একটি ভারতীয় আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে, যার ঠিকানা বর্ধমানের। একইসঙ্গে একটি কলকাতার ঠিকানাযুক্ত আধার কার্ড ও একটি প্যান কার্ডও উদ্ধার হয়েছে। সবকটি নথিই জাল বলে সন্দেহ পুলিশের।

শান্তার স্বামী অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা, রহস্য আরও ঘনীভূত

তদন্তে উঠে এসেছে, শান্তার স্বামী অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। ফলে প্রশ্ন উঠছে— কীভাবে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বসবাস করছিলেন? কীভাবে এতটা নির্ভুলভাবে জাল নথি বানানো সম্ভব হল, তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

নথি যাচাইয়ে জোর, কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগের ভাবনা

পুলিশ সূত্রে খবর, যেহেতু এই ঘটনায় একাধিক রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ রয়েছে, তাই ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবছে লালবাজার। জালিয়াতি কাণ্ডে আরও কেউ জড়িত কিনা, অন্য কোন কোন বাংলাদেশি নাগরিক এইভাবে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছেন, সে বিষয়েও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

শুধু শান্তা নয়, প্রশ্নবিদ্ধ নথি তৈরির গোটা পদ্ধতি

এই ঘটনাটি প্রমাণ করে দিচ্ছে— শুধুমাত্র এক বাংলাদেশি মডেলের গ্রেফতার নয়, গোটা ব্যবস্থারই এক গভীর ফাঁকফোকর রয়েছে। জাল লেটার হেড ও সরকারি নথি তৈরি করে কীভাবে অনুপ্রবেশ ও পরিচয় গোপন করা যায়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই মামলা। ফলে আগামিদিনে এই ধরনের চক্র রুখতে আরও কঠোর নজরদারি ও প্রযুক্তিগত যাচাইয়ের প্রয়োজন বলেই মত নিরাপত্তা মহলের।

Leave a comment