ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আতঙ্ক ডিজিটাল লেনদেনে সাবধান নইলে থমকে যাবে আর্থিক দুনিয়া!

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আতঙ্ক ডিজিটাল লেনদেনে সাবধান নইলে থমকে যাবে আর্থিক দুনিয়া!

অনলাইন যুগে বাড়ছে ঝুঁকি

জঙ্গিপুর : বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় টাকা লেনদেন এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট নির্ভর। তবে এই সহজ লেনদেনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মারাত্মক বিপদ। অনেক সময় অনলাইন গেম খেলার সময় বা মোবাইল অ্যাপে অনিয়ন্ত্রিত লেনদেনের ফলে হঠাৎই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ড বা ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক ক্ষতি এড়াতে সচেতনতা ছাড়া বিকল্প নেই।

ব্যাঙ্কের হাতে আইনি ক্ষমতা

ব্যাঙ্কগুলির কাছে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার একাধিক আইনি অধিকার রয়েছে। অর্থ পাচার, সন্দেহজনক লেনদেন, কিংবা ভুল নথির ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট পরিচালনার মতো ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একবার ফ্রিজ হয়ে গেলে তহবিলে প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আর্থিক কার্যকলাপ থমকে যায়। আর এই কারণেই প্রত্যেক গ্রাহকের উচিত নিয়মিত নিজের অ্যাকাউন্ট চেক করা ও প্রতিটি লেনদেনের খুঁটিনাটি খেয়াল রাখা।

বিশেষজ্ঞদের কড়া সতর্কবার্তা

সাইবার অপরাধের বাড়বাড়ন্তের কারণে আজকাল ছোট্ট একটি অসাবধানতাই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রাহকরা যদি নিয়মিতভাবে তাদের অ্যাকাউন্ট নজরে রাখেন তবে অনেক ক্ষেত্রেই বিপদ এড়ানো সম্ভব। যেমন, অচেনা নম্বর থেকে আসা ইউপিআই রিকোয়েস্ট, সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক বা অতিরিক্ত গেমিং অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থের অদলবদল – এগুলিই মূলত ফ্রিজ হওয়ার অন্যতম কারণ।

পুলিশের সাইবার সতর্কতা

জঙ্গিপুর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক আধিকারিক জানান, আজকাল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ও অনলাইন এসএমএসের মাধ্যমে ভুয়ো লেনদেন বাড়ছে। অনেকেই না বুঝেই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন। অথচ সত্যি বলতে গেলে, ব্যাংক কখনও হোয়াটসঅ্যাপে আর্থিক বার্তা পাঠায় না। শুধুমাত্র অফিসিয়াল এসএমএস ও অ্যাপই ব্যাংকের মাধ্যম। তাই কোনও সন্দেহজনক বার্তা এলেই দ্রুত সচেতন হওয়া দরকার। আর যদি হঠাৎ অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যায়, তবে সর্বপ্রথম নিজের শাখায় যোগাযোগ করাই একমাত্র ভরসা।

ফ্রিজ হলে কী করবেন?

অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রথমেই নিজের ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। ব্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের থেকে কারণ জানতে হবে। যদি নথি ঘাটতির কারণে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ আধার, প্যান বা ঠিকানার প্রমাণের মতো নথি জমা দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কে ওয়াই সি (KYC) আপডেট না থাকায় এই বিপত্তি ঘটে। তাই সময়মতো নথি হালনাগাদ রাখা অত্যন্ত জরুরি।

আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার উপায়

তবে সব সময় সমাধান ব্যাংকের হাতে থাকে না। অনেক সময় আদালতের নির্দেশে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যায়। এই অবস্থায় ‘ভ্যাকেট মোশন’ নামের একটি আইনি আবেদন জমা দিতে হয়। এর জন্য ডেট কালেকশন ডিফেন্স অ্যাটর্নির সাহায্য নেওয়া অপরিহার্য। আদালত গ্রাহকের পক্ষে রায় দিলে ব্যাঙ্ককে বাধ্য হয়ে অ্যাকাউন্ট আনফ্রিজ করতে হয়। তবে প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং আইনি জটিলতায় ভরা।

সামাজিক নিরাপত্তার ব্যতিক্রম

আর্থিক নিয়মকানুন কঠোর হলেও কিছু ক্ষেত্রে সরকার নিজে থেকেই গ্রাহককে সুরক্ষা দেয়। যেমন—সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, অক্ষমতা সুবিধা, বা পেনশনভোগীদের অ্যাকাউন্টে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট সাধারণত ফ্রিজ করা যায় না। আর যদি ভুলবশত ফ্রিজ হয়ও, তবে দ্রুত দাবি জানালে সেই অ্যাকাউন্ট আনফ্রিজ হয়ে যায়। এই বিশেষ সুবিধার কারণেই অসংখ্য প্রবীণ নাগরিক বা অসুস্থ মানুষ আর্থিক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পান।

অজ্ঞতা নয়, সচেতনতাই মূল হাতিয়ার

শেষমেশ প্রশ্ন থেকে যায়—কীভাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানো যাবে? উত্তর একটাই, সচেতনতা। গ্রাহকদের উচিত নিয়মিত নিজের অ্যাকাউন্টে নজর রাখা, সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধ করা, অচেনা লিঙ্ক এড়ানো এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্যাংকে গিয়ে নথি আপডেট করা। পাশাপাশি ব্যাংক ও সরকারের দেওয়া সতর্কবার্তাগুলিকে গুরুত্ব সহকারে মানলেই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের মতো বিপত্তি থেকে বাঁচা সম্ভব।

Leave a comment