বরাহনগরে অবৈধ নেশামুক্তি কেন্দ্রে পুলিশের হানা

বরাহনগরে অবৈধ নেশামুক্তি কেন্দ্রে পুলিশের হানা

নিয়োগীপাড়া রোডের চাঞ্চল্যকর অভিযান, উদ্ধার ৪৬ আবাসিক

বরাহনগরে এক অবৈধ নেশামুক্তি কেন্দ্রে পুলিশের অভিযানে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সরকারি অনুমতিপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছিল এই কেন্দ্র। অভিযোগ, আবাসিকদের ঘরে তালা দিয়ে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। এমনকি একটি ঘরে একসঙ্গে ১০ তরুণীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও বরাহনগর থানার যৌথ অভিযানে এই কেন্দ্র থেকে ৪৬ জনকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগের সূত্র ধরেই অভিযান

জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের গোপন তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য বরাহনগরের নিয়োগীপাড়া রোডের কেজি স্কুলের পাশের গলির একটি পুরনো বাড়িতে চলছিল এই নেশামুক্তি কেন্দ্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখা যাচ্ছিল। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে অভিযোগ জমা পড়তেই বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কয়েকদিন আগে দলটি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে কর্তৃপক্ষ ঢুকতে দেয়নি। এরপর শুক্রবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ফের অভিযান চালানো হয়।

পুলিশ আসতেই বেকায়দায় কর্তৃপক্ষ

দরজা ভেঙে ঘরে পাওয়া গেল ২০ আবাসিক শুক্রবার দুপুরে পুলিশ অভিযানে গেলে নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্ণধার ও কর্মীরা প্রথমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে পুলিশ জোর করে দোতলার একটি ঘরের দরজা খুললে দেখা যায়, সেখানে ২০ জন আবাসিক গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। অথচ অভিযানের আগে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, সেখানে কোনও আবাসিক নেই।

ছাদ টপকে আরও আবিষ্কার

পাশের বাড়ি হয়ে উদ্ধার হল আরও ১৬ জন অভিযানের সময় এক পুলিশকর্মী লক্ষ্য করেন, ছাদে কয়েকজন লুকিয়ে আছে। তিনি পাশের বাড়ি হয়ে ছাদে উঠে গেলে দেখা যায়, আরও ১৬ জন আবাসিক সেখানে অবস্থান করছে। চিকিৎসক ও পুলিশকর্মীরা মিলে তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করেন।

বন্ধ ঘরে বন্দি তরুণীরা

একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার ১০ তরুণী ও মহিলা উদ্ধারের সময় একটি বন্ধ ঘরের ভেতর থেকে ফিসফিস শব্দ আসায় সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। দরজা খুলতেই দেখা যায়, ১০ জন তরুণী ও মহিলা দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে বন্দি ছিলেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা ও মানসিক চাপে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, এখানে নির্যাতন চলত।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নথির অভাব

সি সার্টিফিকেট ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছিল কেন্দ্রটি স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ৪৬ জনকে তিনটি ছোট ঘরে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রটির কাছে কোনও সি সার্টিফিকেট, রেজিস্টার বা নথি পাওয়া যায়নি। পুর পারিষদ সদস্য রামকৃষ্ণ পাল বলেন, এটি ভয়ঙ্কর অপরাধ। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত জানান, সি সার্টিফিকেট ছাড়া কোনও নেশামুক্তি কেন্দ্র চালানো যায় না। আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন্দ্র কর্ণধারের দাবি

“আবেদন করা হয়েছে, নিয়ম মেনেই চলছে”নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্ণধার অভিষেক সিং দাবি করেছেন, সি সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা আছে এবং ট্রেড লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে কেন্দ্রটি চালানো হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশি তদন্তে একাধিক অনিয়ম ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

Leave a comment