‘বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ’—এই প্রবাদ যেন আবারও সত্যি হতে চলেছে। রাখি পূর্ণিমার আবহ কাটতে না কাটতেই হাজির শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পবিত্র দিন। কৃষ্ণভক্তদের কাছে এই উৎসব কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং ভক্তি, আনন্দ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিলনমেলা। এ বছর সারা দেশজুড়ে যেমন, তেমনি বাংলায়ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হবে কৃষ্ণজন্মের এই শুভক্ষণ। কিন্তু ঠিক কোন দিন, কোন মুহূর্তে শুরু হবে পুজোর তিথি? সেই কৌতূহল এখন ভক্তমহলে তুঙ্গে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে অষ্টমী তিথি শুরু হবে ১৫ আগস্ট রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৬ আগস্ট রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে। যদিও কেউ কেউ উদয় তিথি অনুযায়ী ১৫ আগস্ট রাতেই পুজো করেন, তবে মূল জন্মাষ্টমীর আচার পালন হবে ১৬ আগস্ট মধ্যরাতে। কারণ, পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে, রোহিণী নক্ষত্রে, মধ্যরাতেই জন্ম নেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই সেই সময়কে ধরা হয় ভক্তির সর্বোচ্চ মুহূর্ত হিসেবে।
জন্মাষ্টমীর দিনে গৃহস্থালি থেকে মন্দির—সব জায়গাতেই চলে গোপাল আরাধনার প্রস্তুতি। ভক্তরা বাড়ি পরিষ্কার করে পুজোঘর ফুল ও আলোয় সাজান। গোপালের মূর্তি বা ছবি দোলনায় স্থাপন করে শোভিত করা হয়। কৃষ্ণের প্রিয় ফল, মাখন, মিছরি নিবেদন করা হয়। দিনভর ভজন ও কৃষ্ণনাম জপের ধ্বনি শোনা যায় সর্বত্র। মধ্যরাতে দোলনায় গোপালকে দোল দিয়ে, আরতি করে, ভক্তরা মুগ্ধ মনে সেই মহামুহূর্ত উদযাপন করেন।
অনেকেই এই দিনে উপবাস থেকে মধ্যরাতে পুজো সম্পন্ন করে তারপর প্রসাদ গ্রহণ করেন। জ্যোতিষ মতে, এ বছর জন্মাষ্টমীতে রাতের বিশেষ ৪৪ মিনিট থাকবে শ্রীকৃষ্ণ উপাসনার জন্য অত্যন্ত শুভ। বিশ্বাস, এই সময়ে কৃষ্ণের নাম জপ করলে জীবনের সকল বাধা দূর হয় এবং সুখ-সমৃদ্ধি আসে। শাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে, জন্মাষ্টমীর পূজা সন্তানপ্রাপ্তি, দীর্ঘায়ু ও সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনায় বিশেষ ফলপ্রদ। তাই ভক্তরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন এই মহালগ্নে ভক্তি নিবেদনের জন্য।