বর্ষার মরসুমে কেন চুল পড়া থামছে না?

বর্ষার মরসুমে কেন চুল পড়া থামছে না?

বর্ষার আগমনেই শুরু হয় এক ধরনের চুলের দুরবস্থা — ধুলোবালি আর আর্দ্রতা মিলে চুল হয়ে যায় অতিরিক্ত শুষ্ক ও দুর্বল। সেই সঙ্গে শুরু হয় চুল পড়ার সমস্যা, যা বহু মানুষের মাথাব্যথার কারণ। বাজারের প্রচুর শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও অন্যান্য প্রসাধনীতে বদল আনলেও কাজের উন্নতি খুব একটা দেখা যায় না। কারণ চুলের গভীর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত উপাদানের শক্তি। সেক্ষেত্রে এক নবীন সমাধান হিসেবে উঠে আসে জোয়ান বা এজোয়ান (অ্যাজওয়াইন)। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় ঘরোয়া রূপচর্চায় ব্যবহৃত এই মসলা চুল পড়া কমাতে কতটা কার্যকরী, তা আজকের সময়েও প্রাসঙ্গিক।

চুলের যত্নে জোয়ানের গুণাগুণ ও উপকারিতা

জোয়ানের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সরাসরি চুলের ফলিকলকে পুষ্টি জোগায়। এই উপাদানগুলো চুল পড়া কমিয়ে দাড়ায় এবং একই সঙ্গে স্ক্যাল্পের খুশকি দূর করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জোয়ান চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, নতুন চুল গজাতে সহায়ক এবং অকাল পক্কতার সমস্যাও প্রতিরোধ করে। অর্থাৎ বর্ষার অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য জোয়ান একটি দারুণ উপাদান। জোয়ানের তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল হবে ঘন, মজবুত এবং ঝলমলে।

জোয়ানের তেল কিভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন?

চুল পড়া কমাতে ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে জোয়ানের তেল তৈরি খুবই সহজ। প্রথমে এক কাপ নারকেল তেলে দুই চামচ জোয়ান মিশিয়ে তা ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটানোর সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট যথেষ্ট। এরপর তেলটি ছেঁকে নিন এবং ঠাণ্ডা হওয়ার পর সরাসরি চুল ও স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। সপ্তাহে দু-তিনবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে চুল পড়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। নারকেল তেলের সঙ্গে জোয়ানের সংমিশ্রণ চুলের শুষ্কতা কমায় এবং প্রাকৃতিক পুষ্টি যোগায়।

ঘরোয়া জোয়ান হেয়ার মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি

চুলের যত্নে জোয়ানের গুঁড়োও বেশ কার্যকরী। দুই চামচ জোয়ানের গুঁড়ো নিন, তা অর্ধেক কাপ টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর মেশান এক চামচ লেবুর রস। এই মিশ্রণটি পুরো স্ক্যাল্প ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে ৪০ মিনিট রেখে দিন। তারপর মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এই মাস্ক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে আসবে, খুশকি কমবে, এবং চুল পড়ার হার হ্রাস পাবে। টক দই ও লেবুর অম্লতা স্ক্যাল্পকে পরিস্কার করে ও জোয়ানের পুষ্টি সহ চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

জরুরি সময়ের জন্য জোয়ানের জল ব্যবহার

যদি সময় কম থাকে বা হঠাৎ চুলের অবস্থা খারাপ হয়, তবে জোয়ানের জল বানানো যেতে পারে। দুই কাপ জল গরম করে তাতে এক চামচ জোয়ান মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফুটানোর পরে ছেঁকে ঠাণ্ডা হতে দিন। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার করার পর এই জল চুলে ঢালুন। এতে চুলে জোয়ানের পুষ্টি পৌঁছাবে এবং বিশেষ করে খুশকি ও চুল পড়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। জোয়ানের জল ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত চুল ধোয়ার প্রয়োজন হয় না, যা সময় বাঁচায়।

বর্ষায় চুলের যত্নে জোয়ান কেন বেছে নেওয়া উচিত?

বর্ষার আবহাওয়ায় চুলের যত্নে প্রচলিত হেয়ার অয়েল বা কেমিক্যাল ভিত্তিক প্রসাধনীর পরিবর্তে জোয়ান একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর বিকল্প। এতে চুলের গোড়া মজবুত হয়, খুশকি কমে এবং চুল পড়ার হার কমে। প্রতিদিনের ব্যবহারেও জোয়ান চুলে ভালো প্রতিক্রিয়া দেয়, যা চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দীর্ঘস্থায়ী সাহায্য করে। এছাড়াও জোয়ান খাওয়ার মাধ্যমে ও অভ্যন্তরীণভাবে পুষ্টি পাওয়ার কথাও প্রচলিত।

Leave a comment