বেস্ট ক্রেডিট সোসাইটি নির্বাচনে ঠাকরে ব্রাদার্সের বড় ধাক্কা। উদ্ধব ও রাজ ঠাকরের সমর্থিত উৎকর্ষ প্যানেল একটিও আসন জিততে পারেনি। শশাঙ্ক রাও প্যানেল ১৪টি এবং মহাযুতি প্যানেল সাতটি আসন পেয়েছে।
Maharashtra: বেস্ট ক্রেডিট সোসাইটি ২০২৫-এর নির্বাচনের ফলাফল মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় মোড় এনেছে। এই নির্বাচনে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (UBT) এবং রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (MNS)-এর জোট ‘উৎকর্ষ প্যানেল’ একটিও আসন জিততে পারেনি। এর ফলে সমবায় সমিতির ওপর শিবসেনার নয় বছরের দখল শেষ হয়ে গেছে। শশাঙ্ক রাওয়ের প্যানেল ২১টির মধ্যে ১৪টি আসন জিতেছে, যেখানে মহাযুতি প্যানেল সাতটি আসনে জয়লাভ করেছে।
ঠাকরে ব্রাদার্সের ঐতিহাসিক জোটও ব্যর্থ
প্রায় ২০ বছর পর ঠাকরে ব্রাদার্স একসঙ্গে এসেছিলেন। উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ ঠাকরের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক মহলে বড় "গেম চেঞ্জার" মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বেস্ট সোসাইটি নির্বাচনে তাঁদের জোট কাজে আসেনি। উদ্ধব ও রাজের সমর্থিত ‘উৎকর্ষ প্যানেল’ কোনো আসনই পায়নি। এই পরাজয় তাঁদের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
শশাঙ্ক রাও প্যানেলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স
এই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে শশাঙ্ক রাওয়ের প্যানেল। তাঁরা ১৪টি আসন জিতে সোসাইটির ওপর নিজেদের শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করেছেন। শশাঙ্ক রাও একজন পরিচিত ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং দীর্ঘদিন ধরে বেস্ট কর্মীদের ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বাবা শরদ রাও-ও বড় ইউনিয়ন নেতা ছিলেন। এই কারণে শশাঙ্ক রাওয়ের শ্রমিক ও কর্মচারী মহলে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এই শক্তিই তাঁকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে।
মহাযুতি প্যানেলের সম্মানজনক জয়
বিজেপি ও তার সহযোগীদের মহাযুতি প্যানেলও এই নির্বাচনে সাতটি আসন পেয়েছে। এই সংখ্যা শশাঙ্ক রাও প্যানেলের থেকে কম হলেও ঠাকরে ব্রাদার্সকে হারাতে তাঁদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই ফলাফল মহাযুতি জোটকে আরও শক্তিশালী করেছে।
উদ্ধব-রাজের জোটের প্রথম পরীক্ষা ব্যর্থ
রাজ ঠাকরে ২০০৬ সালে শিবসেনা থেকে আলাদা হয়ে এমএনএস তৈরি করেছিলেন। তখন থেকে দুটি দল একে অপরের কট্টর বিরোধী ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁরা কাছাকাছি এসেছেন। মুম্বাই নগর নিগম (BMC) নির্বাচনের আগে এই প্রথম ঠাকরে ব্রাদার্স একসঙ্গে নির্বাচনে লড়লেন। বেস্ট সোসাইটি নির্বাচনকে তাঁদের একতার "লিটমাস টেস্ট" হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরাজয় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে শুধু একসঙ্গে আসাটাই যথেষ্ট নয়। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গেলে মাঠ পর্যায়ে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
বিএমসি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন
বেস্ট নির্বাচনে পরাজয় ঠাকরে ব্রাদার্সের কৌশলকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে যে তাঁরা যদি ছোট সোসাইটি নির্বাচনে কোনো আসন না পান, তাহলে বিএমসি-র মতো বড় নির্বাচনে কীভাবে সাফল্য পাবেন। মহাযুতি জোট ইতিমধ্যেই মুম্বাইয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে এবং এই ফলাফল ঠাকরে গোষ্ঠীর জন্য অশনি সংকেত।
মারাঠি ভোটব্যাংকের চ্যালেঞ্জ
উদ্ধব ও রাজ দুজনেই মারাঠি ভাষী সম্প্রদায়কে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। বেস্ট কর্মচারী ও স্থানীয় ভোটব্যাংকের ওপর তাঁদের আশা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছে যে তাঁদের মূল ভোটব্যাংক এখনও বিক্ষিপ্ত। শশাঙ্ক রাওয়ের মতো নেতারা শ্রমিক ও স্থানীয় ভোটারদের নিজেদের সঙ্গে ধরে রেখেছেন।
কাজে আসেনি একতার আবেদন
ঠাকরে ব্রাদার্স বেস্ট কর্মচারী ও মারাঠি ভোটারদের কাছে "একতা" দেখানোর এবং তাঁদের প্যানেলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই আবেদন ফলপ্রসূ হয়নি। ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক জোট করে ভোট পাওয়া যায় না। জনগণ প্রার্থীদের কাজ ও মাঠের পরিস্থিতি দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়।