রাতের খাবার খাওয়ার সঠিক সময়: আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই অফিস ফেরার পর রাত ১০টার পর খেতে বসেন, কেউ কেউ এমনকি ১২টার পরও ডিনার করেন। এই অভ্যাসই ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, বলছেন চিকিৎসকরা। আমেরিকার পুষ্টিবিদ অ্যাসলে লুকাস জানাচ্ছেন, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় মেনে খাওয়ার রুটিন তৈরি করলে শরীরের ‘বডি ক্লক’ ঠিকভাবে কাজ করে, হরমোন ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
স্থূলত্ব—নতুন ‘অতিমারী’
চিকিৎসকদের মতে, স্থূলত্ব এখন বৈশ্বিক সমস্যা। আমেরিকায় প্রতি ৫ জনে ৩ জন স্থূলত্বে ভুগছেন, ভারতে সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রবণতা মারাত্মক আকার নেবে বলে আশঙ্কা। কারণ স্থূলত্ব শুধু শারীরিক গঠন নয়, হৃদরোগ, ডায়াবিটিস, স্ট্রোক, রক্তচাপ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।
দেহের ঘড়ি মেনে খাওয়ার গুরুত্ব
মানবদেহের নিজস্ব সময়চক্র বা সার্কাডিয়ান রিদম হরমোনের কাজ ও বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। রাতের দেরি করে খাওয়া সেই চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যাস্তের পর বেশি দেরি না করে রাতের খাবার খেলে শরীরের বিপাক হার সক্রিয় থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে খাওয়া কেন আদর্শ
অ্যাসলে লুকাসের মতে, ওজন কমাতে সূর্যকে অনুসরণ করতে হবে। সূর্যাস্তের মধ্যে রাতের খাবার শেষ করলে পরের সকালে ব্রেকফাস্টের আগে ১২ ঘণ্টার ফাঁক তৈরি হয়। এই ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’-এর মতো ব্যবধান শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ফ্যাট বার্নিং বাড়ায়।
সন্ধ্যা ৭টার আগে ডিনারের ৩টি বড় উপকারিতা
হজম শক্তি বৃদ্ধি: আগেভাগে খেলে শরীর খাবার হজমে পর্যাপ্ত সময় পায়, গ্যাস, অম্বল বা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমে।শর্করা নিয়ন্ত্রণ: সময়মতো খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে, ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমে।বিপাক হার বৃদ্ধি: তাড়াতাড়ি ডিনার করলে মেটাবলিজ়ম ভালো থাকে, যা ওজন ঝরানোর মূল চাবিকাঠি।
রাতে দেরিতে খাওয়ার ক্ষতি
রাত ৯টার পর খেলে খাবার হজম হতে সময় লাগে, ফলে ফ্যাট জমে যায়। দেরিতে খাওয়ার অভ্যাস ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়—যা সরাসরি ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী।
ওজন কমানোর লড়াইয়ে শুধু ডায়েট নয়, সময়ও বড় ভূমিকা নেয়। চিকিৎসকদের মতে, দেহের সার্কাডিয়ান ক্লক মেনে রাতের খাবার খেলে বিপাকহার বাড়ে ও হজম উন্নত হয়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যেই রাতের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।