বিজেপির নবনির্বাচিত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের স্বাগত জানাতে আয়োজিত অনুষ্ঠান ছিল উৎসবমুখর। কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামের বিশাল মঞ্চজুড়ে হাজির ছিলেন দলের নেতা, কর্মী, প্রাক্তন মন্ত্রীরা। ব্যানার, ফেস্টুন, স্লোগানে জমজমাট ছিল অনুষ্ঠান। কিন্তু এই আনন্দঘন পরিবেশে হঠাৎই নেমে এল ভয়ঙ্কর স্তব্ধতা—যখন মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এক দাপুটে বিজেপি নেতা। মঞ্চে দাঁড়ানো নেতারা বুঝে উঠতেই পারছিলেন না কী ঘটেছে।
হঠাৎই বুকে যন্ত্রণা, মঞ্চেই লুটিয়ে পড়লেন তমোঘ্ন ঘোষ!
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন উত্তর কলকাতার বিজেপি জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। বহুদিন ধরেই সংগঠনে সক্রিয় এই নেতা হঠাৎই মঞ্চে বুকে যন্ত্রণা অনুভব করেন। তিনি সামনের চেয়ারে বসা অবস্থায়ই মাথা হেঁট করে ফেলেন, তারপরেই তাঁর শরীর দুলে ওঠে। উপস্থিত কর্মীরা প্রথমে বিষয়টিকে পাত্তা না দিলেও মুহূর্তেই বিষয়টির গুরুত্ব বোঝা যায়, যখন তমোঘ্ন ঘোষ সোজা মঞ্চেই লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে হইচই শুরু হয় মঞ্চে।
শংসাপত্রের আগে বিপর্যয়! আতঙ্কের ছায়া পুরো মঞ্চ জুড়ে
সেই সময় মঞ্চে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, যিনি শমীক ভট্টাচার্যের হাতে সভাপতি নির্বাচনের শংসাপত্র তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই ঘটে যায় এই নাটকীয় ও বেদনাদায়ক ঘটনা। নেতার এই আচমকা অসুস্থতায় থমকে যায় গোটা অনুষ্ঠান। কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় মাইক, থেমে যায় স্লোগান। আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উদ্বাহু পরিস্থিতির মধ্যে নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন অসুস্থ নেতার দিকে।
দলীয় গাড়িতে ছুটে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে
অবস্থা বেগতিক দেখে দেরি না করে দলীয় কর্মীরা তমোঘ্ন ঘোষকে তুলে নিয়ে যান বিজেপি নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর গাড়িতে। বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছনোর পরই জরুরি বিভাগে তাঁকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যথাযথ চিকিৎসা শুরু করার ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়া দেন তমোঘ্ন। উপস্থিত নেতাদের একাংশ হাসপাতালে ছুটে যান, বাকিরা থেকে যান অনুষ্ঠানে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।
চিকিৎসায় সাড়া, আপাতত স্থিতিশীল তমোঘ্ন ঘোষের শারীরিক অবস্থা
চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, হৃদরোগজনিত সমস্যার কারণেই এই বিপত্তি। ECG, রক্তচাপ, হৃদস্পন্দনসহ একাধিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, “ভাগ্যক্রমে সময়মতো নিয়ে আসা সম্ভব হওয়ায় বড় বিপদ এড়ানো গেছে।” বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনায় বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তবে আপাতত তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার জন্য।
রাজনীতির আবহে বাড়ছে প্রশ্ন! কি অতিরিক্ত চাপেই কি এই বিপত্তি?
নেতৃত্ব পরিবর্তনের এই সময়ে দলে বাড়ছে চাপ, দায়িত্ব, প্রত্যাশা—সবকিছুই একসঙ্গে এসে পড়েছে নেতাদের উপর। তমোঘ্ন ঘোষের মতো একজন সংগঠনিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ নেতার উপর বাড়তি কাজের বোঝা ছিল, বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। দলীয় এক সদস্য নাম না করে বলেন, “উত্তর কলকাতার দায়িত্ব একা হাতে সামলাচ্ছিলেন তিনি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই ধাক্কা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।