বিহার নির্বাচন ২০২৫-এর আগে জেডিইউ-কে বড় ধাক্কা। বেগুসরাইয়ের প্রাক্তন বিধায়ক এবং প্রভাবশালী নেতা বোগো সিং আরজেডিতে যোগ দিলেন। তিনি বলেন, এখন তাঁর লক্ষ্য তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী করা।
Bihar Election: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর আগে বেগুসরাই জেলার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন হয়েছে। নীতিশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-কে বড় ধাক্কা। মতিহানি বিধানসভা থেকে চারবারের বিধায়ক এবং একসময়ের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচিত নরেন্দ্র কুমার সিং ওরফে বোগো সিং জেডিইউ ছেড়ে রাষ্ট্রীয় জনতা দলে (আরজেডি) যোগ দিয়েছেন। তিনি তাঁর বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
আরজেডিতে যোগদানের ঘোষণা
বোগো সিং সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে তাঁর মন সবসময় আরজেডির সঙ্গে ছিল এবং এখন তিনি প্রকাশ্যে আরজেডিতে যোগ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আরজেডি এখন তাঁর পরিবার এবং তিনি সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পার্টিকে শক্তিশালী করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তাঁর প্রথম লক্ষ্য বেগুসরাইয়ের সাতটি আসনই মহাজোটকে জেতানো।
তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী করার লক্ষ্য
বোগো সিং স্পষ্ট করে বলেন যে তাঁর প্রথম কাজ তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী করা। তিনি বলেন, আরজেডি কর্মী হিসেবে তিনি পুরো শক্তি দিয়ে কাজ করবেন এবং বিহারে পরিবর্তনের ঢেউকে আরও শক্তিশালী করবেন। তিনি বলেন যে আরজেডির সৈনিক হয়ে তিনি প্রতিটি আসনে পার্টিকে জেতানোর চেষ্টা করবেন।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বোগো সিং খুব সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। মতিহানি আসনে এলজেপি প্রার্থী রাজকুমার সিং তাঁকে মাত্র ৩৩৩ ভোটে হারিয়েছিলেন। বোগো সিং বলেন যে হারের পরেও নীতিশ কুমার এবং এনডিএ পাঁচ বছরে একবারও তাঁর খোঁজ নেয়নি। এই অবহেলার কারণেই তিনি দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন।
মতিহানি আসনের রাজনৈতিক সমীকরণ
মতিহানি বিধানসভা আসনে সবসময় রাজনীতি আকর্ষণীয়। এখানে প্রভাবশালী নেতাদের আধিপত্য রয়েছে। বোগো সিং প্রথমবার ২০০৫ সালে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতেছিলেন। ফেব্রুয়ারি ২০০৫ এবং নভেম্বর ২০০৫ উভয় নির্বাচনেই তিনি সফল হন। এরপর ২০১০ এবং ২০১৫ সালে জেডিইউ-এর টিকিটে জয়লাভ করেন। কিন্তু ২০২০ সালে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান।
জেডিইউ-তে অবহেলা এবং অসন্তোষ
নির্বাচনে হারার পর জেডিইউ বোগো সিংকে অবজ্ঞা করে। পার্টিতে রাজকুমার সিংকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যিনি আগে এলজেপিতে ছিলেন এবং পরে জেডিইউতে যোগ দেন। ২০২৫-এর নির্বাচনেও জেডিইউ-এর তরফে রাজকুমার সিংকেই প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এতে বোগো সিংয়ের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
মহাজোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেই বোগো সিং মহাজোটের প্রার্থীর জন্য প্রকাশ্যে প্রচার করেছিলেন। সেই কারণেই তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল যে তিনি শীঘ্রই আরজেডি বা মহাজোটের কোনো দলে যোগ দেবেন। এখন তাঁর আরজেডিতে যোগদানের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে তিনি ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহাজোটের তরফে সক্রিয় থাকবেন।
আরজেডিতে স্বাগত এবং প্রত্যাশা
আরজেডিতে যোগ দেওয়ার পর বোগো সিং বলেন যে এখন তিনি সম্পূর্ণরূপে পার্টির প্রতি নিবেদিত। তিনি বলেন, তিনি প্রত্যেক কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন এবং বেগুসরাইয়ের সব আসনে মহাজোটের জয় নিশ্চিত করবেন। তিনি এও বলেন যে পার্টি যদি তাঁকে প্রার্থী করে, তাহলে তিনি মতিহানি আসন থেকে নির্বাচন লড়বেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দল।
তেজস্বী যাদবের জন্য বড় সমর্থন
বিহারের রাজনীতিতে বোগো সিংয়ের নাম একটি প্রভাবশালী মুখ হিসেবে পরিচিত। তাঁর পরিচিতি শুধু বেগুসরাই নয়, আশেপাশের এলাকাতেও রয়েছে। আরজেডি আশা করছে যে তাঁর যোগদানে মহাজোট বড় সুবিধা পাবে। বিশেষ করে বেগুসরাইয়ের মতো জেলায়, যেখানে বিজেপি এবং এনডিএ-র শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনের সময় বোগো সিং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের প্রতিও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন যে রাজনীতিতে পরিস্থিতি বদলাতে বেশি সময় লাগে না। তাঁর ইঙ্গিত ছিল যে কখনও বড় ব্যবধানে জেতা নেতারাও এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
মতিহানি আসনে নতুন সমীকরণ
২০২০ সালের নির্বাচনে মতিহানি আসনটি মহাজোটের অধীনে সিপিএম-এর অধীনে ছিল। সেই নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী রাজেন্দ্র সিং তৃতীয় স্থানে ছিলেন এবং বোগো সিং সামান্য ভোটের জন্য হেরে যান। এখন ২০২৫ সালের নির্বাচনে এই আসনটি মহাজোটের পক্ষ থেকে কাকে দেওয়া হবে, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হবে। যদি আরজেডি এইবার আসনটি নিজের কাছে রাখে, তাহলে বোগো সিংকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।