ট্রাম্পের শুল্ক বোমা: বিদেশি ট্রাক আমদানিতে ২৫% শুল্ক ঘোষণা, বিশ্ববাজারে তোলপাড়

ট্রাম্পের শুল্ক বোমা: বিদেশি ট্রাক আমদানিতে ২৫% শুল্ক ঘোষণা, বিশ্ববাজারে তোলপাড়
সর্বশেষ আপডেট: 1 ঘণ্টা আগে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে মাঝারি ও ভারী ট্রাক আমদানির উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। এর আগে তিনি ইস্পাত, অটো এবং ফার্মাসেক্টরের উপরও উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। ট্রাম্পের এই নীতিকে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করা এবং বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর দিকে আরও একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শুল্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও শুল্ক বোমা ফাটিয়ে মাঝারি ও ভারী ট্রাক আমদানিতে ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন, যা ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার শিল্প স্বার্থ রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রশাসন ইস্পাত, অটো যন্ত্রাংশ, ওষুধ, কাঠ এবং আসবাবপত্রের মতো অনেক পণ্যের উপরও শুল্ক বাড়িয়েছিল। ভারত সহ চীন এবং ইউরোপীয় দেশগুলির উপরও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে তা নিশ্চিত।

ট্রাম্পের নতুন আদেশ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন যে ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে আমেরিকায় বিদেশি থেকে আসা সমস্ত মাঝারি ও ভারী ট্রাকের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন ট্রাক উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে এবং বিদেশি নির্ভরতা কমাতে নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্বব্যাপী অটোমোবাইল শিল্পে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

দেশীয় শিল্পের স্বস্তি, বিদেশি সংস্থাগুলির উপর চাপ

নতুন শুল্কের অধীনে, আমেরিকায় দেশীয়ভাবে ট্রাক উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল, যে সংস্থাগুলি আমেরিকায় তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করছে, তাদের এই ২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে রক্ষা করা হবে। কিন্তু যে সংস্থাগুলি বিদেশ থেকে ট্রাক আমদানি করছে, তাদের উপর ব্যাপক ব্যয়ের বোঝা বাড়বে। এই সিদ্ধান্তের ফলে জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতের মতো বিদেশি ব্র্যান্ডের ট্রাক নির্মাতারা বড় ধাক্কা খেতে পারেন।

এর আগেও বহু শুল্ক আরোপ করা হয়েছে

ট্রাম্প প্রশাসন এই বছর আগেও অনেক পণ্যের উপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে ব্র্যান্ডেড এবং পেটেন্ট করা ওষুধের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক অন্তর্ভুক্ত। সফটউড কাঠের উপর ১০ শতাংশ, আসবাবপত্রের উপর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এবং রান্নাঘরের ক্যাবিনেট ও বাথরুম ভ্যানিটির উপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং তামার উপরও শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছিল। আর ২০২৫ সালের শুরুতে আমদানি করা অটোমোবাইল এবং অটো যন্ত্রাংশের উপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

আমেরিকান ভোক্তাদের উপর প্রভাব

এই ক্রমাগত বাড়তে থাকা শুল্কের প্রভাব এখন আমেরিকান ভোক্তাদের উপরও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেশীয় এবং শিল্প পণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে। আসবাবপত্র থেকে নির্মাণ সামগ্রী পর্যন্ত সব কিছুর দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্কের সিদ্ধান্ত আমেরিকার মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

ভারত সহ অনেক দেশের উপর কঠোর অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসন এবার শুধু এক বা দুটি দেশকে নয়, বিশ্বের সমস্ত দেশকে তার শুল্কের আওতায় এনেছে। ইউনিভার্সাল বেসলাইন শুল্কের অধীনে, অপ্রতিরোধিত দেশগুলি থেকে আসা বেশিরভাগ পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটিকে "লিবারেশন ডে শুল্ক" বলা হয়েছিল, যা এপ্রিল ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।

এছাড়াও, দেশ-ভিত্তিক শুল্কও নির্ধারণ করা হয়েছে। যে দেশগুলির সাথে আমেরিকার বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের উপর এই হার ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। উদাহরণস্বরূপ, চীনের উপর মোট ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে।

ভারতও এর থেকে রেহাই পায়নি। ভারতের উপর প্রাথমিকভাবে ২৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, কিন্তু পরে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা যোগ করা হয়। এর ফলে ভারতীয় পণ্যের উপর মোট শুল্কের হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

বিশ্ববাজারে অস্থিরতা

ট্রাম্পের এই নতুন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। মার্কিন বাজারে এশীয় এবং ইউরোপীয় ট্রাক সংস্থাগুলির অংশীদারিত্ব ইতিমধ্যেই কমছিল, এখন এটি আরও প্রভাবিত হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এর ফলে কেবল অটো সেক্টরে প্রতিযোগিতা বাড়বে না, বরং সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ শৃঙ্খলেও প্রভাব পড়বে।

Leave a comment