বসিরহাটের কাঁচাগোল্লা: উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তার স্বাদ ও ঐতিহ্যের জন্য আজও জনপ্রিয়। শোনা যায়, ষাটের দশকে মহানায়ক উত্তমকুমার সন্দেশখালিতে শ্যুটিংয়ের সময় এই কাঁচাগোল্লা খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই থেকেই এই মিষ্টির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আজও প্রতিটি টুকরো কাঁচাগোল্লায় মিশে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শ্রম, ঐতিহ্য ও ভালোবাসা।

ঐতিহ্যের গল্প: বসিরহাটের কাঁচাগোল্লার উৎপত্তি
বসিরহাটের কাঁচাগোল্লার ইতিহাস বহু পুরনো। কথিত আছে, এর উৎপত্তি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা থেকে। সেই অঞ্চলের কিছু মিষ্টি কারিগর বহু বছর আগে বসিরহাটে এসে এই মিষ্টির যাত্রা শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বসিরহাটের নিজস্ব স্বাদে ও ঘ্রাণে পেয়েছে এক অনন্য পরিচিতি।
হাতে তৈরি ছানার জাদু
এলাকার ময়রারা প্রতিদিন ভোরে দুধ সংগ্রহ করে তৈরি করেন তাজা ছানা। সেই ছানা দিয়েই তৈরি হয় নরম, তুলতুলে কাঁচাগোল্লা। কোনও যন্ত্রের ব্যবহার নয়—পুরোটাই হাতে গড়া শিল্প। তাই প্রতিটি টুকরোতেই মেলে পরিশ্রম, ঐতিহ্য ও ভালোবাসার নিখুঁত মিশ্রণ।
মহানায়ক উত্তমকুমারের প্রিয় মিষ্টি
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল্লা মণ্ডলের কথায়, “শুনেছি, মহানায়ক উত্তমকুমার সন্দেশখালিতে শ্যুটিংয়ের সময় এই কাঁচাগোল্লা খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।” এরপর থেকেই বসিরহাটের কাঁচাগোল্লা হয়ে ওঠে রাজনীতিক, অভিনেতা থেকে সাধারণ মানুষের প্রিয় মিষ্টি। আজও স্থানীয় ময়রারা গর্বের সঙ্গে সেই কাহিনি বলেন।

শৈলেন মণ্ডলের দোকান ও মুখ্যমন্ত্রীর সফর
বসিরহাটের প্রাচীন ‘শৈলেন মণ্ডল অ্যান্ড সন্স’ দোকান আজও সেই ঐতিহ্য বহন করছে। কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিঙ্গলগঞ্জ সফরের সময় তাঁর জন্য কাঁচাগোল্লা গিয়েছিল এই দোকান থেকেই। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বসিরহাটের কাঁচাগোল্লা শুধুই একটি মিষ্টি নয়, এটি এক গর্বের প্রতীক।
বসিরহাটের মিষ্টি, প্রবাসীদের নস্টালজিয়া
যাঁরা বসিরহাট ছেড়ে বাইরে কাজ করেন, তাঁরা ঘরে ফিরলেই খোঁজ করেন প্রিয় কাঁচাগোল্লার। অনেকেই আবার আত্মীয়-স্বজনের কাছে উপহার হিসেবে নিয়ে যান এই মিষ্টি। যেন বসিরহাটের এক টুকরো ঘ্রাণ পৌঁছে যায় দূরে থাকা প্রিয়জনের কাছে।

বসিরহাটের কাঁচাগোল্লা শুধু একটি মিষ্টি নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। মহানায়ক উত্তমকুমারও একসময় এই মিষ্টির প্রেমে পড়েছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্থানীয় ময়রারা এই স্বাদের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।









