‘पंचायत ৪’-এ মাধব-এর চরিত্রে অভিনয় করা বুল্লু কুমার পরিবার ছেড়ে মুম্বাইয়ে এসে অনেক কষ্ট করেছেন। আর্থিক অনটন এবং কটাক্ষের মধ্যে তিনি অভিনয়ে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। এখন তিনি দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, তবে তাঁর পিছনের গল্পটি অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক।
Bulloo Kumar: সংগ্রাম যত গভীর হয়, দীপ্তি ততটাই তীব্র হয়। এই প্রবাদটি আজ টিভিএফ-এর হিট ওয়েব সিরিজ ‘पंचायत ৪’-এর উদীয়মান অভিনেতা বুল্লু কুমারের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য। বিনোদ, বনরাকস এবং প্রহল্লাদ-এর মতো সিরিজের প্রধান চরিত্রগুলো যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, সেখানে মাধব নামক আরেকটি চরিত্র, যিনি বুল্লু কুমার-এর অভিনয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন।
মাধবের চরিত্রটি ছোট হলেও, প্রভাবশালী দৃশ্যে তার উপস্থিতি জানান দেয়। তবে তাঁর পিছনের গল্প, বুল্লু কুমারের ব্যক্তিগত জীবন, কোনো ফিল্মি চিত্রনাট্যের চেয়ে কম নয়। দারিদ্র্য, কটূক্তি, পরিবারের বিরোধিতা এবং একাকীত্বের সাথে লড়াই করে বুল্লু কুমার সেই স্থানে পৌঁছেছেন, যা আজ তাঁর কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ।
‘पंचायत ৪’-এ পার্শ্ব চরিত্র, কিন্তু প্রভাব অসাধারণ
১৮ই মে, ২০২৫-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘पंचायत সিজন ৪’ আবারও তার সরল কিন্তু গভীর গল্প দিয়ে মানুষের মন জয় করেছে। এই সিজনে প্রধান চরিত্রগুলির মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলির সংঘর্ষ দেখানো হলেও, মাধবের মতো পার্শ্ব চরিত্রগুলি সিরিজে প্রাণ এনে দিয়েছে। বুল্লু কুমারের মাধব চরিত্রটি, ভূষণ এবং বিনোদের মতো জনপ্রিয় চরিত্রগুলির সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর দেশীয় ভঙ্গি, কথোপকথন এবং বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ দর্শকদের খুব পছন্দ হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও #MadhavInPanchayat ট্রেন্ডিং হচ্ছে।
বুল্লুর জীবনের আসল ‘पंचायत’
বুল্লু কুমার বিহারের একটি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। একসময় আর্থিক কষ্টের কারণে তিনি এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন যে, ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন দেওয়াও তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন—মুম্বাইয়ে গিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করার। কোনো ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই, কোনো গডফাদার বা গ্যারান্টি ছাড়াই বুল্লু মুম্বাইয়ে পৌঁছলেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গ্রামে রেখে এসেছিলেন, কারণ তাঁদের খরচ চালানো তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। অনেক রাত খালি পেটে কেটেছে, কিন্তু বুল্লু হার মানেননি।
‘নচনিয়া’ বলা হত, কিন্তু মনে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ছিল
বুল্লু একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কীভাবে শুরুতে আত্মীয়স্বজন এবং গ্রামের লোকেরা তাঁকে কটূক্তি করত—‘নচনিয়া হতে চলেছে’, ‘নৌটঙ্কি করছে’, ‘পরিবার ছেড়ে পালিয়েছে’। কিন্তু আজ, তাঁরাই তাঁর ভিডিও ক্লিপ এবং মিম শেয়ার করছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের বলেছি, আমার অর্থে বিলাসিতা করার কথা ভেবো না, নিজে চেষ্টা করো। আমি যা করছি, তা কোনো বিলাসিতার জীবন নয়, এটা আমার প্রয়োজন এবং স্বপ্ন উভয়ই।’
শব্দ ছাড়াই বদলে গেল ভাগ্য
‘पंचायत ৪’-এ অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার পর বুল্লু কুমারের জীবনে পরিবর্তন আসা শুরু হয়। আগে মানুষ তাঁকে এড়িয়ে যেত, এখন চেনে। আগে অডিশন দেওয়ার জন্য আকুতি জানাতে হতো, এখন সরাসরি ডাক আসে। যদিও বুল্লু এখনও মুম্বাইয়ের একটি ছোট ঘরে থাকেন এবং পরিবারকে সঙ্গে আনতে পারেননি। তাঁর স্বপ্ন, একদিন তিনি তাঁর পরিবারকে মুম্বাইয়ে নিয়ে আসবেন, সন্তানদের এখানে ভালো শিক্ষা দেবেন।
মা-বাবা-ভাইয়ের মৃত্যু, যা গভীর বেদনা সৃষ্টি করেছে
তাঁর গল্পের আবেগপূর্ণ অংশে বুল্লু আরও বলেছিলেন, কীভাবে তাঁর বাবা, মা এবং ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে অসুস্থতার কারণে। ‘আমি তাঁদের চিকিৎসার জন্য কিছু করতে পারিনি, এই কষ্ট আজও আমার হৃদয়ে আছে’, তিনি বলেছিলেন। এই কষ্টই আজও তাঁকে শক্তিশালী করে তোলে। তাঁর মতে, প্রতিটি দৃশ্যে তাঁর সেই সংগ্রাম ফুটে ওঠে, যা তিনি বাস্তবে অনুভব করেছেন।
‘पंचायत’ প্রমাণ করেছে—প্রতিটি চরিত্রের গুরুত্ব আছে
‘पंचायत’ এমন একটি ওয়েব সিরিজ, যেখানে প্রধান অভিনেতা যেমন উজ্জ্বল, তেমনি প্রতিটি ছোট-বড় চরিত্রও গুরুত্ব পায়। বুল্লু কুমারের মাধবও এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই সিরিজটি দর্শকদের দেখিয়েছে যে, অভিনয় কেবল নামী-দামী চেহারার একচেটিয়া অধিকার নয়, বরং এটি প্রতিভার স্বীকৃতি—সেটা গ্রামের কোনো ছেলে হোক না কেন।