কলকাতা হাইকোর্টের রায় স্থগিত বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি নতুন বিতর্কে উত্তাল রাজ্য

 কলকাতা হাইকোর্টের রায় স্থগিত বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি নতুন বিতর্কে উত্তাল রাজ্য

বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি তকমা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা স্থগিত

কলকাতা হাইকোর্টে চলছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মামলা। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। মালদহের আমির শেখের মতো অনেককে আটকে রাখার অভিযোগ সামনে এসেছে। পরিবার তাঁদের মুক্তি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু বুধবার বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়—এই মুহূর্তে শুনানি হবে না। কারণ, একই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ফলে শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

সুপ্রিম কোর্টের মামলার প্রভাব

আইনজীবীদের বক্তব্য অনুযায়ী, শীর্ষ আদালতে যেহেতু একই বিষয় বিচারাধীন, তাই কলকাতা হাইকোর্ট আপাতত চূড়ান্ত অবস্থান নিচ্ছে না। ২৯ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হবে। তারপরে রাজ্যের মামলার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। ফলে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ তৈরি করেছে নতুন অপেক্ষার আবহ। আদালত জানিয়েছে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বাংলার মামলা ঝুলে থাকবে।

পরিবারের অসহায়তা, আদালতের আশ্বাস

যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য বিচার চাইছেন। সন্তান, স্বামী কিংবা পিতা হঠাৎ করেই শ্রমের খোঁজে গিয়ে অন্য রাজ্যে আটকে যাচ্ছেন। বাড়ি ফিরে আসতে পারছেন না। অভিযোগ, তাঁরা শুধু বাংলায় কথা বলেন বলেই বাংলাদেশি তকমা পাচ্ছেন। পরিবারগুলির দাবি, এই অন্যায় আটক অবিলম্বে বন্ধ হোক। আদালত যদিও জানিয়েছে, পরিবারগুলির অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

হাইকোর্টের প্রশ্নে প্রশাসন অস্বস্তিতে

আগেই কলকাতা হাইকোর্ট কড়া প্রশ্ন তুলেছিল প্রশাসনের কাছে—কিসের ভিত্তিতে আটকে রাখা হয়েছে বাংলার শ্রমিকদের? কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল কি? আটকানোর পরে তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এখন তাঁরা কোথায় রয়েছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। বিশেষত যেসব রাজ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, সেখান থেকে এখনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি।

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা

ওড়িশা, দিল্লি, মহারাষ্ট্রসহ একাধিক রাজ্যে বাংলার শ্রমিকরা কাজের খোঁজে যান। কিন্তু সেখানেই তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এতে একদিকে যেমন তাঁদের জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে ভেঙে পড়ছে পরিবারও। অনেক ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর ধরে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ফলে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা, বয়স্ক বাবা-মায়ের চিকিৎসা সবকিছুই থমকে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। শাসকদল থেকে শুরু করে বিরোধী সব শিবিরই বিষয়টি নিয়ে সরব। রাজ্যের শাসকদল অভিযোগ করেছে—বাংলাভাষীদের ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে অপমানিত করা হচ্ছে। বিরোধীরা আবার প্রশ্ন তুলছে, রাজ্য সরকার কেন এতদিন ধরে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে রাজনৈতিক তরজাও মামলার সঙ্গে সমান তালে এগোচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে কোনও নাগরিককে সন্দেহ করা সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। কারও মাতৃভাষা যদি বাংলা হয়, তা তাঁকে বাংলাদেশি প্রমাণ করে না। সংগঠনগুলি কেন্দ্রীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছে, এই অন্যায় আটক অবিলম্বে বন্ধ করা হোক এবং যাঁরা আটকে রয়েছেন তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

আগামী দিনের দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে

সব মিলিয়ে এখন দৃষ্টি শীর্ষ আদালতের দিকে। ২৯ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হলে পরবর্তী পদক্ষেপের পথ পরিষ্কার হতে পারে। তার আগ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের মামলার শুনানি স্থগিতই থাকবে। পরিবারগুলির চোখ এখন দিল্লির দিকে। তাঁরা আশা করছেন, অন্তত সুপ্রিম কোর্ট থেকে ন্যায়বিচার মিলবে। আর রাজ্যের আইনি মহলও মনে করছে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশই নির্ধারণ করবে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাগ্য।

প্রতিটি অনুচ্ছেদের বর্ণনা 

বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে আটক মামলার শুনানি হাইকোর্টে স্থগিত।

সুপ্রিম কোর্টের মামলার কারণে কলকাতা হাইকোর্ট আপাতত রায় দিচ্ছে না।

আটকে থাকা শ্রমিকদের পরিবার আদালতের দারস্থ হয়ে বিচার চাইছে।

হাইকোর্ট প্রশাসনের কাছে কঠিন প্রশ্ন তুললেও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

অন্য রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়ছে।

রাজনৈতিক মহলে মামলাকে ঘিরে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলি বাংলাভাষীদের আটক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এখন দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে, সেখানেই নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত।

Leave a comment