ক্যালিফোর্নিয়ায় আছড়ে পড়ল সুনামির ঢেউ, আতঙ্ক ছড়াল উপকূলবর্তী এলাকায়

ক্যালিফোর্নিয়ায় আছড়ে পড়ল সুনামির ঢেউ, আতঙ্ক ছড়াল উপকূলবর্তী এলাকায়

প্রাকৃতিক তাণ্ডবের ঝটকা ক্যালিফোর্নিয়ায়

ক্যালিফোর্নিয়ার এরিনা কোভে উপকূলে আচমকাই ধেয়ে এল ভয়ঙ্কর সুনামি ঢেউ। সুনামির উচ্চতা ছিল ১.৬ ফুট, যা অনেকের কাছে হয়তো সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু সমুদ্রতটে থাকা মানুষ এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে এটি ছিল একপ্রকার ভয়ের বার্তা। উপকূলবর্তী এলাকায় হঠাৎ করে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ায় শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য।

আশঙ্কায় বাসিন্দারা, সতর্কতা জারি প্রশাসনের

সুনামির খবরে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। এরিনা কোভের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সমুদ্রের হঠাৎ রং বদলানো এবং ঢেউয়ের অস্বাভাবিক গর্জন আগাম সংকেত দিয়েছিল, কিন্তু তখনও কেউ আন্দাজ করতে পারেনি আসতে চলেছে সুনামির আঘাত। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সতর্কতা জারি করে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ভূমিকম্প না থাকলেও সুনামি কেন? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের

এবারের সুনামির অন্যতম বিস্ময় এই যে, কোনও বড় ধরনের ভূমিকম্পের খবর পাওয়া যায়নি যার কারণে সাধারণত এমন ঢেউ তৈরি হয়। সমুদ্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, গভীর সমুদ্রে কোনো ভূগর্ভস্থ স্খলন বা সাবমেরিন ল্যান্ডস্লাইড হতে পারে যার প্রভাবে এই মাঝারি আকারের সুনামি তৈরি হয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)।

বিপদ কতটা বড় হতে পারত? রইল প্রশ্ন

যদিও ১.৬ ফুট উচ্চতার ঢেউ খুব বড় মনে না হলেও, এটি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারত বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ এর গতি ছিল অত্যন্ত বেশি। সমুদ্রতট থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এই ঢেউ উঠে পড়ে উপকূলে। স্থানীয় বাসিন্দা রোডরিক জ্যাকসন বলেন, "জীবনে এমন ভয়ঙ্কর সাগরের গর্জন শুনিনি, মনে হয়েছিল সাগর যেন তাণ্ডব শুরু করেছে।"

মৎস্যজীবীদের বিশেষ সতর্কতা জারি

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যালিফোর্নিয়ার মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া নৌকাগুলিকে দ্রুত ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য উপকূলবর্তী অঞ্চলে মৎস্য অভিযান সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমুদ্র এখনও স্থিতিশীল নয়।

পরবর্তী ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে কি?

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এরকম ধরনের মধ্যম মানের সুনামির পরে আরও কিছু ছোট ঢেউ আসার সম্ভাবনা থাকেই। তাই সাগরের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলবর্তী এলাকায় অস্থায়ী ত্রাণ শিবির তৈরি রাখা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে রেড অ্যালার্ট না জারি হলেও, ভোর পর্যন্ত নজরদারি চালানো হবে।

সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে

এ ধরনের আকস্মিক ঢেউ কেবল মানুষের নিরাপত্তাকেই প্রশ্নে ফেলে না, বরং সামুদ্রিক জীবজগৎ ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকেও বড় ধাক্কা দেয়। সুনামির কারণে সমুদ্রের তলার বাস্তুতন্ত্রে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকছে। ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু তটে ইতিমধ্যেই মৃত মাছ ভেসে ওঠার খবর মিলেছে, যা দুশ্চিন্তার বিষয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

আরও নজরদারি চাই সমুদ্রপারে

এই সুনামি দেখিয়ে দিল প্রকৃতি কতটা অনিশ্চিত। আগামী দিনে উপকূলবর্তী এলাকা গুলিকে আরও বেশি টেকসই এবং নিরাপদ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। জেলেদের জন্য আগাম সতর্কতা প্রযুক্তি আরও উন্নত করা, উপকূলরক্ষীদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো, এবং বাসিন্দাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

Leave a comment