কানাডায় বিমান হাইজ্যাক: নিজেকে আল্লাহর দূত দাবি, এফ-১৫ এর তাড়া

কানাডায় বিমান হাইজ্যাক: নিজেকে আল্লাহর দূত দাবি, এফ-১৫ এর তাড়া

কানাডায় শাহির কাসিম নামক এক ব্যক্তি বিমান হাইজ্যাক করে নিজেকে 'আল্লাহর দূত' বলে দাবি করেন। NORAD এফ-15 ফাইটার জেট দিয়ে ধাওয়া করে নিরাপদে অবতরণ করায়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সতর্ক হয়ে গেছে।

Vancouver: কানাডার ভ্যাঙ্কুভার বিমানবন্দরে গত মঙ্গলবার একটি অপ্রত্যাশিত এবং চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সমস্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সতর্ক হয়ে গেছে। একজন ব্যক্তি নিজেকে 'আল্লাহর দূত' বলে একটি ছোট বিমান হাইজ্যাক করে। এই গুরুতর ঘটনার পরে, NORAD (নর্থ আমেরিকান এরোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড) তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে এফ-15 জঙ্গি বিমান দিয়ে তার পিছু ধাওয়া করে এবং অবশেষে তাকে নিরাপদে অবতরণ করতে বাধ্য করে।

ঘটনার ক্রম: কীভাবে বিমান দখল করা হয়েছিল

39 বছর বয়সী শাহির কাসিম নামক ব্যক্তি ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের ভিক্টোরিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত একটি বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করে। সেখানে একজন প্রশিক্ষককে হুমকি দিয়ে সে Cessna নামক একটি ছোট বিমান দখল করে নেয়। এরপর সে প্রায় 64 কিলোমিটার উড়ে ভ্যাঙ্কুভারের দিকে রওনা হয়।

আকাশ পথে নিরাপত্তার জন্য NORAD-এর পদক্ষেপ

বিমান দখলের খবর পাওয়া মাত্রই NORAD-এর ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিট দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। এফ-15 ফাইটার জেটগুলিকে সতর্ক করা হয় এবং সন্দেহভাজন বিমানটিকে ট্র্যাক করা হয়। হাইজ্যাকার যখন বুঝতে পারে যে তাকে থামানো হচ্ছে, তখন সে বিমানটি ভ্যাঙ্কুভার বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।

হাইjackারের পরিচয় এবং মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

শাহির কাসিমের পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির তদন্ত শুরু হয়ে যায়। পুলিশের মতে, কাসিম নিজেকে 'আল্লাহর দূত' এবং 'মানবতার মসিহা' বলে দাবি করেছে। সে আরও দাবি করে যে সে 'জিব্রাইল ফেরেশতা'র মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে বার্তা পেয়েছে এবং মানবজাতিকে 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং'-এর বিপদ থেকে বাঁচাতে এসেছে।

সন্ত্রাসবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তদন্ত

রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (RCMP) এই ঘটনাকে 'সন্ত্রাসবাদ-অনুপ্রাণিত হাইজ্যাকিং' আখ্যা দিয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কানাডার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে গুরুতর ধারা জারি করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যামি লব প্রেসকে জানান যে 'এটি কোনও ব্যক্তিগত মানসিক ভারসাম্যহীনতার ঘটনা নয়, বরং একটি আদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত কাজ।'

কাসিমের অতীত: প্রাক্তন পাইলট, পরিবেশ কর্মী এবং ‘ব্লগার’

কাসিমের অতীতও বেশ আগ্রহ উদ্দীপক। তিনি একসময় ভ্যাঙ্কুভার ভিত্তিক 'KD এয়ার' নামক একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইন্সে কাজ করতেন। এয়ারলাইন্সের প্রাক্তন মালিকদের মতে, তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী পাইলট। কিন্তু পরে তিনি মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হন এবং পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে সক্রিয় হন। কাসিম 'আর্কটিক নিউজ' নামে একটি ব্লগও চালান, যেখানে তিনি আর্কটিক অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে গুরুতর সতর্কতা জারি করেন।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য

শাহির কাসিমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায় যে তিনি 2012 সালে একটি সাইকেল যাত্রাও করেছিলেন, যেখানে তিনি কানাডা জুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি অনেকবার সতর্ক করে বলেছিলেন যে পৃথিবীর অবস্থা খুবই গুরুতর এবং মানুষের খুব শীঘ্রই বড় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সরকারি প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির প্রশংসা

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রিমিয়ার ডেভিড অ্যাবি এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এটি একটি অত্যন্ত অদ্ভুত পরিস্থিতি ছিল। সৌভাগ্যবশত, এটি কোনও প্রাণহানি ছাড়াই শেষ হয়েছে। আমি সেই সমস্ত নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশংসা করি, যারা সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।

Leave a comment