কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ₹১২,৩২৮ কোটি ব্যয়ে চারটি রেল প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, যা সরাসরি গুজরাট, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, বিহার এবং আসামকে উপকৃত করবে। এর ফলে ৫৬৫ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক প্রসারিত হবে, ৬৮ এমটিপিএ অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন ক্ষমতা যুক্ত হবে, তেল আমদানি ও CO2 নিঃসরণ হ্রাস পাবে এবং কর্মসংস্থান ও পর্যটন বৃদ্ধি পাবে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার ভারতীয় রেলওয়ের চারটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ₹১২,৩২৮ কোটি। এর মধ্যে গুজরাটের कच्छ অঞ্চলে একটি নতুন রেললাইন এবং তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, বিহার ও আসাম এই তিনটি রাজ্যে মাল্টি-ট্র্যাকিং প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পগুলি ৫৬৫ রুট কিলোমিটার প্রসারিত করবে, পণ্য ও যাত্রী পরিষেবা উন্নত করবে, পর্যটন বৃদ্ধি করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, পাশাপাশি তেল আমদানি ও কার্বন নিঃসরণও হ্রাস করবে।
গুজরাটে রেল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ
গুজরাটের कच्छ অঞ্চলে দেশেরেলাপুর থেকে লাখপাত পর্যন্ত একটি নতুন রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা সবুজ সংকেত পেয়েছে। এই লাইনটি প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এবং এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২,৫২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে তিন বছর সময় লাগবে।
এই লাইনটি ধোলাভিরা, কোতেশ্বর মন্দির, নারায়ণ সরোবর এবং লাখপাত কেল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে সরাসরি রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করবে। এতে পর্যটন যথেষ্ট উপকৃত হবে। এছাড়াও, এই রুটে লবণ, সিমেন্ট, কয়লা, বেন্টোনাইট এবং ক্লিংকারের মতো শিল্প সামগ্রীর পরিবহন সহজ হবে।
নতুন লাইনটি ১৩টি রেলওয়ে স্টেশন এবং ৮৬৬টি গ্রামকে সরাসরি উপকৃত করবে। এর ফলে ১৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের সংযোগ উন্নত হবে এবং कच्छের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নের গতি বাড়বে।
দক্ষিণ ভারত আরও শক্তিশালী হবে
তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকে সেকেন্দ্রাবাদ ও ওয়াদির মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন তৈরির কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পটি ১৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এবং এর ব্যয় ৫,০১২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য পাঁচ বছর সময় ধরা হয়েছে।
এই প্রকল্পটি দক্ষিণ ভারতের যাত্রী ও পণ্য ট্রেন উভয়কেই উপকৃত করবে। ক্রমবর্ধমান ট্র্যাফিক এবং ভিড়ের সমস্যা হ্রাস পাবে এবং পণ্য পরিবহন সময়মতো সম্পন্ন হবে।
বিহারে রেল সুবিধা বৃদ্ধি পাবে
বিহারে ভাগলপুর থেকে জামালপুর পর্যন্ত তৃতীয় লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই লাইনটি ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এবং এর জন্য ১,১৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এটি তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
ভাগলপুর ও জামালপুর অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ যাত্রী এই প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত সুবিধা পাবে। এছাড়াও, পণ্যবাহী ট্রেনগুলির চলাচল দ্রুততর হবে এবং শিল্প কার্যক্রমও জোরদার হবে।
আসামে নেটওয়ার্ক দ্বিগুণ হবে
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ফুর্কাটিং থেকে নিউ তিনসুকিয়া পর্যন্ত রেললাইন দ্বিগুণ করার কাজ অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পটি ১৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর জন্য ৩,৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বে রেল সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে। এখানকার স্থানীয় জনসংখ্যা, শিল্প ও পর্যটন সরাসরি উপকৃত হবে।
পরিবেশ ও অর্থনীতির উপকার
এই চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে রেল নেটওয়ার্কের মোট ৫৬৫ রুট কিলোমিটার প্রসারিত হবে। এর ফলে পণ্য ও যাত্রী ট্রেনগুলির চলাচল দ্রুততর হবে। অপারেশনাল কার্যকারিতা বাড়বে এবং পরিষেবার নির্ভরযোগ্যতা উন্নত হবে।
সরকারের অনুমান, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ৫৬ কোটি লিটার তেল আমদানির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে। এছাড়াও, ৩৬০ কোটি কিলোগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণও হ্রাস পাবে। এটি প্রায় ১৪ কোটি গাছ লাগানোর সমতুল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে বছরে ৬৮ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কয়লা, সিমেন্ট, সার, ফ্লাই অ্যাশ, ইস্পাত, কৃষি পণ্য, কন্টেইনার এবং পেট্রোলিয়ামের মতো সামগ্রীর পরিবহন সহজ হবে।
কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে গতি আসবে
এই রেল প্রকল্পগুলি প্রায় ২৫১ লক্ষ মানব-দিবস প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গতি আসবে।