ট্রাম্পের ট্যারিফের ধাক্কা সামলাতে নতুন রাস্তায় ভারত নজরে ৪০ দেশের বাজার

ট্রাম্পের ট্যারিফের ধাক্কা সামলাতে নতুন রাস্তায় ভারত নজরে ৪০ দেশের বাজার

মার্কিন চাপ, বিকল্প খুঁজছে ভারত

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ নীতির ফলে ভারতীয় রপ্তানিতে বড়সড় চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষত মার্কিন বাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের জেরে ভারতীয় টেক্সটাইল পণ্যের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমার আশঙ্কা। এই ঘাটতি মেটাতে ভারত এবার কৌশল বদল করছে। যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরতা কমিয়ে বেছে নেওয়া হয়েছে অন্তত ৪০টি আন্তর্জাতিক বাজার, যেখানে নতুন করে প্রবেশের মাধ্যমে রপ্তানির গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নজরে ব্রিটেন থেকে জাপান, কানাডা থেকে অস্ট্রেলিয়া

কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা জানাচ্ছেন, বিকল্প বাজার হিসেবে ভারত নজর রাখছে ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় দেশগুলির দিকে। ব্রিটেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকো, রাশিয়া, বেলজিয়াম, তুর্কিয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বাজারকে বিশেষভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই দেশগুলিতে টেক্সটাইল পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে।

৫৯ হাজার কোটি ডলারের বাজারে ভারতের অংশ

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই ৪০টি দেশের মোট টেক্সটাইল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫৯ হাজার কোটি ডলার। অথচ এর মধ্যে ভারতের শেয়ার সীমিত হয়ে আছে মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যদি সঠিক কৌশল গ্রহণ করা যায় এবং মানসম্মত পণ্যের ধারাবাহিক যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তবে ভারতের বাজার দখলের হার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা লক্ষ্য নির্ধারণ

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ৪০ দেশের জন্য আলাদা মার্কেট স্ট্র্যাটেজি তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা করে চাহিদার মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে— কোন পণ্য বেশি জনপ্রিয়, কোথায় টেক্সটাইলের কী ধরণের প্রয়োজন বেশি, সেই হিসেব করেই ভারতীয় রপ্তানি বাড়ানো হবে। সংশ্লিষ্ট এক অফিসার জানিয়েছেন, আমাদের টেক্সটাইল পণ্যের গুণমান আন্তর্জাতিক মানের। সঠিক সময়ে সঠিক বাজারে পৌঁছে দিতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে ভারতীয় বস্ত্রশিল্প অনেকটাই লাভবান হবে।

এক্সপোর্ট কাউন্সিলগুলির বাড়তি ভূমিকা

এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলগুলি। তারা বাজার খতিয়ে দেখছে, কোন দেশে কোন প্রোডাক্টের চাহিদা কেমন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ার ও প্রদর্শনীতেও ভারতীয় প্রস্তুতকারীদের উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে। এতে বিদেশি ক্রেতাদের সামনে সরাসরি ভারতীয় পণ্যের প্রদর্শন সম্ভব হচ্ছে।

ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টকে হাতিয়ার করছে ভারত

শুধু তাই নয়, ভারতের সঙ্গে যেসব দেশের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (FTA) রয়েছে, সেগুলোকেও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে আমদানি শুল্কে সুবিধা পাওয়া যাবে এবং ভারতীয় পণ্য অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় সস্তা দামে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এর ফলে ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

মার্কিন নির্ভরতা কমার সম্ভাবনা

ট্রাম্প প্রশাসনের চাপানো শুল্ক ভারতীয় অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি করলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নতুন রপ্তানি কৌশল কার্যকর হলে মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে যাবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের টেক্সটাইল শিল্প আরও স্থিতিশীল হবে এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও বাড়বে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

তবে সবকিছু এতটা সহজ নয়। ইউরোপীয় এবং এশীয় বাজারে প্রবেশ করতে হলে ভারতকে কঠোর মান নিয়ম, পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং ডেলিভারি সময়সীমার মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানতে হবে। সঠিক প্রস্তুতি না থাকলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবুও বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, কারণ ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পের ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্য ইতিমধ্যেই বিশ্বের নজর কেড়েছে।

উপসংহার

ট্রাম্পের ট্যারিফ ভারতীয় রপ্তানির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ বটে, তবে সেটিই ভারতের সামনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। ৪০ দেশের বাজারকে লক্ষ্য করে নতুন পরিকল্পনা সফল হলে শুধু টেক্সটাইল নয়, সামগ্রিক রপ্তানি ক্ষেত্রেই ভারত আরও শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারবে। তাই বলা যায়, একদিকে সংকট, অন্যদিকে সুযোগ— এই দুইয়ের সমন্বয়ে ভারত এখন এক নতুন রপ্তানি যাত্রার পথে।

Leave a comment