যৌন সঙ্গমের পর মহিলারা 'এই কাজটি' না করলে হতে পারে জরায়ুমুখের ক্যানসার লক্ষণ কী কী জানুন দেরি করলে বিপদ !

যৌন সঙ্গমের পর মহিলারা 'এই কাজটি' না করলে হতে পারে জরায়ুমুখের ক্যানসার লক্ষণ কী কী জানুন দেরি করলে বিপদ !

ভারতে প্রতি বছর ৮০ হাজার প্রাণ কাড়ছে এই ক্যানসার!

ভারতের ক্যানসার চিত্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতি বছর প্রাণ কেড়ে নেয় প্রায় ৮০ হাজার মহিলার। চিকিৎসকরা বলছেন, এই মারাত্মক ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো—অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধির অভাব। প্রাথমিক ধাপে রোগ ধরা না পড়লে, বিপদ বাড়ে বহুগুণ। তবুও বহু মহিলা এখনো ‘এই রোগ’ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারেন না।জরায়ুমুখ ক্যানসার ভারতে ভয়ঙ্কর বাস্তব। প্রতি বছর হাজার হাজার মৃত্যু ঘটছে—অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধির অভাবে।

স্তন ক্যানসার যেখানে শহুরে, জরায়ুমুখ ক্যানসার সেখানে গ্রামীণ মহিলাদের দুঃস্বপ্ন

AIIMS-এর রেডিয়েশন অনকোলজির প্রধান ডাঃ সুমন ভাস্কর বলছেন, স্তন ক্যানসার মূলত উচ্চবিত্ত ও শহুরে মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও, জরায়ুমুখ ক্যানসার মূলত নিম্নবিত্ত ও গ্রামীণ মহিলাদের দেহে বাসা বাঁধে। কেন? কারণ, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে চরম অবহেলা এবং সচেতনতার অভাব। তাঁদের মধ্যে এখনও মাসিক, সেক্সুয়াল হাইজিন নিয়ে কথা বলা নিষিদ্ধের মতো বিষয়।দারিদ্র্য ও সমাজের কুসংস্কার জরায়ুমুখ ক্যানসারের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠছে—বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মহিলাদের জন্য।

“পিরিয়ডের সময় কথা বলা মানেই লজ্জা” – এই মানসিকতা মারাত্মক ক্ষতির কারণ

ভারতীয় সমাজে এখনও পিরিয়ড বা যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয় না। পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতা উপেক্ষা করা, পুরনো কাপড় ব্যবহার, যৌনমিলনের পর পরিষ্কার না হওয়া—এই সব কারণেই বাড়ে ইনফেকশনের সম্ভাবনা। আর সেই ইনফেকশনেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় ভয়ঙ্কর জরায়ুমুখ ক্যানসার। চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতা শুরু হওয়া উচিত স্কুল স্তর থেকেই।সামাজিক ট্যাবু ভেঙে পিরিয়ড ও হাইজিন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা সময়ের দাবি। নাহলে ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ হবে।

"সমস্যা বললে বিয়ে ভেঙে যাবে?" — এই ভয়েই চুপ মেয়েরা!

অনেক মহিলা আজও নিজেদের শরীর সংক্রান্ত সমস্যার কথা গোপন রাখেন, কারণ তাঁরা ভয় পান—তাঁকে কেউ বিশ্বাস করবে না, না-কি সমাজে বদনাম হবে! বিশেষ করে বিয়ের পর যৌনমিলনে ব্যথা বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হলেও তা বলতেই সাহস পান না অনেকে। ফলে সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ জরায়ুমুখ ক্যানসার রোগী হাসপাতালে আসেন শেষ পর্যায়ে, যখন চিকিৎসা জটিল এবং ব্যয়বহুল।ভয়ের কারণে অসুখ গোপন রাখা মারাত্মক। সময়মতো চিকিৎসা না হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে প্রবল।

এই স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানলেই ঝুঁকি অনেকটাই কমবে

পিরিয়ডের সময় প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর স্যানিটারি প্যাড, ট্যাম্পন বা কাপ পরিবর্তন করা আবশ্যক। যৌনমিলনের পরে ও প্রতিদিন ব্যক্তিগত অঙ্গ পরিষ্কার রাখা বাধ্যতামূলক। সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, পেরিনিয়াম অঞ্চল জল দিয়ে পরিষ্কার করা, এবং শুকনো রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা বলছেন, কাপড়ের বদলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্যাড ব্যবহার করাই শ্রেয়।ছোট ছোট স্বাস্থ্যবিধি প্রতিদিন মানলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।

সময়মতো ধরা পড়লে ১০০% সাফল্য সম্ভব

ডাঃ সুমন জানাচ্ছেন, যদি সময়মতো রোগ শনাক্ত করা যায়, তাহলে জরায়ুমুখ ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। এমনকি চিকিৎসা ভারতেই সহজলভ্য। কিন্তু সমস্যা হলো, রোগীরা অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন—আপনার যদি অস্বাভাবিক রক্তপাত, ব্যথা বা স্রাব হয়, দেরি না করে পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।তাড়াতাড়ি রোগ ধরা পড়লে জীবন বাঁচানো সম্ভব। তাই লজ্জা না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

HPV টিকা যা প্রতিটি মেয়ের জীবনে বদল আনতে পারে

জরায়ুমুখ ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ HPV ভাইরাস। এবং ভালো খবর হলো—ভারতে এখন এইচপিভি (HPV) প্রতিরোধী টিকা পাওয়া যায়। ৯ বছর বয়সের পর থেকে এই টিকা দেওয়া যায়, যা ভবিষ্যতে মেয়েদের নিরাপদ রাখে। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু মহিলারা নন, অল্প বয়সী কিশোরীদেরও এই টিকা দেওয়া উচিত—তবেই প্রকৃত নিরাপত্তা সম্ভব।

Leave a comment