ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে বুধবার সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ৬.২ পরিমাপ করা হয়েছে। স্থানীয় সময় ভোরে আসা এই ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
জাকার্তা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বুধবার সকালে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে। দেশের আবহাওয়া বিজ্ঞান, জলবায়ু ও ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা (BMKG) অনুসারে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ৬.২ রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সকালে সুলাওয়েসি দ্বীপের উত্তর উপকূলীয় অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়। তবে স্বস্তির খবর হলো, ভূমিকম্পের পর কোনো ধরনের সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়নি।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র
BMKG-এর মতে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সুলাওয়েসি দ্বীপের উত্তর উপকূলের কাছে সমুদ্রের গভীরে। কম্পন এতটাই তীব্র ছিল যে আশেপাশের এলাকার মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং জরুরি দলগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় এটি সাম্প্রতিক সময়ে নথিভুক্ত দ্বিতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর আগে গত সপ্তাহে মালুকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে বান্দা সাগরে প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার গভীরে ৬.৬ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই সময়ও BMKG কোনো সুনামির সতর্কতা জারি করেনি। এই ধারাবাহিক ভূমিকম্প মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ এবং এখানে এমন কম্পন স্বাভাবিক।

সুনামির আশঙ্কা নেই
সাধারণত এই অঞ্চলে যখন ৬.০ বা তার বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প হয়, তখন সুনামির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু BMKG স্পষ্ট করেছে যে এই ভূমিকম্পের গভীরতা এবং দিক বিবেচনা করে সমুদ্রে বড় ঢেউ ওঠার সম্ভাবনা নেই। সংস্থাটি মানুষকে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে এবং শুধুমাত্র সরকারি সূত্র থেকে তথ্য নিতে আবেদন করেছে।
BMKG-এর মুখপাত্র বলেছেন, "আমরা সমস্ত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছি, কিন্তু বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই। এখন পর্যন্ত কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।" ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের "রিং অফ ফায়ার" (Ring of Fire) অঞ্চলে অবস্থিত — এটি এমন একটি এলাকা যেখানে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি প্রধান টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয় এবং একে অপরের সাথে সংঘর্ষ হয়।
ইন্দোনেশিয়ার নিচে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং প্যাসিফিক প্লেটের মতো বিশাল টেকটোনিক প্লেট রয়েছে। এই প্লেটগুলির ক্রমাগত গতিবিধি এবং সংঘর্ষের কারণে এখানে প্রায়শই ছোট এবং বড় ভূমিকম্প ঘটে। এই কারণেই ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং ফিলিপাইনসের মতো দেশগুলি এই "রিং অফ ফায়ার" জোনে বারবার কম্পন অনুভব করে।
ইন্দোনেশিয়া অতীতেও অনেক বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৪ সালে সুমাত্রার উপকূলের কাছে ৯.১ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প ভয়াবহ সুনামির জন্ম দিয়েছিল, যার ফলে ভারত মহাসাগরের বেশ কয়েকটি দেশে প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে সুলাওয়েসি প্রদেশের পালু শহরে ৭.৫ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল।











