দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব: ক্ষতিপূরণ এবার দক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম বেতনের হারে

দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব: ক্ষতিপূরণ এবার দক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম বেতনের হারে

সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশের এক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের মামলায় ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু বা স্থায়ী পঙ্গুত্ব হলে, ক্ষতিপূরণ দক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম বেতনের হিসাবে দেওয়া হবে। বীমা কোম্পানি দায়ী থাকবে।

New Delhi: সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশের একটি দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করেছে। আদালত স্পষ্ট করেছে যে, যদি কোনো দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু হয় বা সে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়, তবে তার ক্ষতিপূরণ দক্ষ শ্রমিকের (Skilled Worker) ন্যূনতম বেতনের হিসাবে দেওয়া হবে। এর আগে এই ধরনের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ কাল্পনিক আয়ের (Notional Income) ভিত্তিতে গণনা করা হতো, যা বর্তমানে বার্ষিক ৩০,০০০ টাকা নির্ধারিত ছিল।

সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে বলেছে যে, এখন রাজ্যে দক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম বেতনই শিশুর আয় হিসাবে গণ্য করা হবে। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে দক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন মাসিক ১৪,৮৪৪ টাকা অর্থাৎ দৈনিক ৪৯৫ টাকা।

নথিপত্র পেশ করার দায়িত্ব

সুপ্রিম কোর্ট আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্ত দাবিকারীকে ন্যূনতম বেতনের প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে পেশ করতে হবে। যদি দাবিকারী তা করতে না পারে, তবে এই দায়িত্বের উপর নজরদারি করবে বীমা কোম্পানি। আদালত আদেশের অনুলিপি সকল মোটর দুর্ঘটনা দাবি ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছে, যাতে সারা দেশে এই রায়ের প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।

ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ

এই ঘটনাটি ১৪ অক্টোবর ২০১২ সালের। ইন্দোরের বাসিন্দা আট বছরের হিতেশ প্যাটেল তার বাবার সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল, তখনই একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় হিতেশ গুরুতর আহত হয় এবং তাকে স্থায়ী পঙ্গুত্বের সম্মুখীন হতে হয়।

হিতেশের বাবা-মা মোটর দুর্ঘটনা দাবি ট্রাইব্যুনালে ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল মনে করে যে হিতেশের ৩০ শতাংশ পঙ্গুত্ব হয়েছে এবং বীমা কোম্পানিকে তিন লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

হাইকোর্টের ভূমিকা

এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। হাইকোর্ট লক্ষ্য করে যে হিতেশের বয়স মাত্র আট বছর। এই ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত সংশোধন করে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে আট লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত স্বস্তি দিল

এই রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। সুপ্রিম কোর্ট ১ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ তার ঐতিহাসিক রায়ে এটি গ্রহণ করে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৩৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের প্রভাব সারা দেশে চলা মোটর দুর্ঘটনা দাবি মামলার উপর পড়বে।

রায়ের গুরুত্ব

সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত শিশুদের জন্য সুরক্ষা কবচ (Protection Shield) প্রমাণিত হবে। এখন দুর্ঘটনায় শিশুর পঙ্গুত্ব বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলির দ্বারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত হবে। এই সিদ্ধান্ত থেকে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে ক্ষতিপূরণের গণনা শুধুমাত্র কাল্পনিক বা ন্যূনতম অর্থের ভিত্তিতে হবে না, বরং রাজ্যে দক্ষ শ্রমিকের বেতনই মানদণ্ড হবে। এর ফলে শিশুদের বাবা-মায়েরা দুর্ঘটনার পর উপযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ পাবেন।

Leave a comment