চীনের কাইওয়া টেকনোলজি কোম্পানি এমন একটি ‘গর্ভবতী রোবট’ তৈরি করছে, যা মানুষের মতো গর্ভধারণ করে সন্তান জন্ম দিতে পারবে। এই প্রযুক্তিটি প্রচলিত সারোগেসি এবং আইভিএফ থেকে আলাদা। কোম্পানিটি আগামী এক বছরের মধ্যে এটি বাজারে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গর্ভবতী রোবট: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রতিদিনই নতুন নতুন আবিষ্কার সামনে আসছে, কিন্তু এবার চীন যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে। চীনের একটি টেক কোম্পানি কাইওয়া টেকনোলজি (Kiwa Technology) এমন একটি রোবট তৈরি করছে, যা মানুষের মতো গর্ভধারণ করতে পারবে এবং সন্তান জন্ম দিতে পারবে।
কোম্পানির দাবি, এই প্রযুক্তিটি প্রচলিত আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) এবং সারোগেসি থেকে আলাদা এবং এটি আগামী ১২ মাসের মধ্যে বাজারে আনা যেতে পারে।
মানুষের গর্ভের মতো রোবোটিক পেট
চীনা মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই রোবট একটি বিশেষ ইনকিউবেশন পড এবং রোবোটিক পেট দিয়ে তৈরি, যা একজন মহিলার গর্ভের মতো কাজ করবে।
এখানে গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া কৃত্রিমভাবে অনুকরণ করা হবে। অর্থাৎ, ভ্রূণের বিকাশ, পুষ্টি এবং অবশেষে সন্তানের জন্ম— সবকিছুই রোবটের ‘শরীরের’ ভিতরে হবে।
কোম্পানির বক্তব্য, এই প্রযুক্তি মহিলা এবং দম্পতিদের গর্ভধারণের কঠিন প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ দেবে।
দাম এবং উপলব্ধতা
কাইওয়া টেকনোলজির সিইও ঝ্যাং কিফেং জানিয়েছেন, এই গর্ভবতী রোবটের দাম প্রায় ১ লক্ষ ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা) রাখা হবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে, এটি ২০২৬ সালের শুরুতেই গ্রাহকদের জন্য উপলব্ধ হতে পারে।
কারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে?
ঝ্যাং কিফেং-এর মতে, এই প্রযুক্তি সেই সব দম্পতি বা ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, যারা সন্তান চান কিন্তু গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে চান না, অথবা চিকিৎসার কারণে তা করতে পারেন না।
তিনি বলেন,
'আমাদের উদ্দেশ্য হল প্রজনন প্রক্রিয়াকে আরও নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তোলা, যাতে যারা ঐতিহ্যবাহী উপায়ে পিতামাতা হতে পারেন না তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়।'
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা ও বিতর্ক
এই খবর সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Weibo-তে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই বিষয়ে ১০ কোটির বেশি ভিউ হয়েছে। সমর্থকরা এটিকে 'মানবতার জন্য প্রযুক্তিগত আশীর্বাদ' বলে অভিহিত করেছেন, বিশেষ করে যারা বন্ধ্যাত্ব বা অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে লড়ছেন।
তবে, সমালোচকদের মতে, রোবোটিক গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুরা মাতৃত্বের সেই অনুভূতি এবং বন্ধন পাবে না, যা প্রাকৃতিক গর্ভ থেকে পাওয়া যায়। এছাড়াও, এই প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য প্রভাব এবং শিশুদের মানসিক বিকাশের উপরও প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
- প্রজনন বিশেষজ্ঞ ড. লি ওয়েঞ্জিং-এর মতে, এই প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে হওয়া উচিত, যাতে এটি শুধুমাত্র চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়।
- গবেষক অধ্যাপক মেই ঝাও-এর মতে, 'এই ধরনের মেশিন প্রাকৃতিক জন্মের বিকল্প হতে পারে না, তবে এটি কিছু নির্বাচিত ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে।'
নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ
এই প্রযুক্তি শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, নৈতিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও চ্যালেঞ্জিং। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়, তবে প্রজনন শিল্পে বড় পরিবর্তন আসতে পারে, যা ঐতিহ্যবাহী পরিবার এবং মাতৃত্বের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে পারে। অনেক দেশে এই ধরনের প্রযুক্তির জন্য স্পষ্ট আইন নেই, যার কারণে ভবিষ্যতে আইনি বিতর্ক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।